মেঝেতে রক্তের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে। গলাকাটা মুরগীর মতো কাতরাচ্ছে সাদিক। শরীর থেকে রক্ত নির্গত হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে মেঝে। তার শরীরে বসবাস করা রক্তই যেনো তার সাথে আড়ি বেঁধেছে। তার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দেহেতে আর থাকবে না তারা। আর এ—সব দেখে চেহারায় পৈশাচিক শান্তির হাসির রেখা ফুটে উঠেছে হুডি পরিধেয় ব্যাক্তিটির ঠোঁটের কোণে। তার দুই ঠোঁটের কোণে কেবল এক প্রশান্তির হাসি। সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় মেঝেতে রক্তের স্রোতের উপর কাতরে যাচ্ছে সাদিক। হুডি পরিধেয় লোকটির চোখে তীব্র নেশার আগুনের ফুলকি দেখা যাচ্ছে। এ নেশা কীসের নেশা তা বুঝা বড় দায়। অজ্ঞাত লোকটি নিজ পকেট থেকে একটি "Salt" লবণের প্যাকেট বের করে হাতে নিলেন। ইতোমধ্যেই মিস্টার সাদিকের সমস্ত শরীরে অসংখ্য ব্লেডের পোচ দেখা যাচ্ছে সেই সাথে ছুরির ফলার চিহ্ন। নিম্নাঙ্গে হাজারো ব্লেডের পোচ। অণ্ডকোষ একটা বেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। আর তা মেঝেতেই গড়াগড়ি খাচ্ছে। হুডি পরিধেয় লোকটির হাতে "ঝধষঃ" লবণের প্যাকেট দেখে ভয়ে জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেলেন তিনি। তার শরীরে যদি এই মুহূর্তে এক জার্রা পরিমাণ লবণের সংস্পর্শ পায়। তবে তা মৃত্যুর যন্ত্রণার চাইতেও অধিক ভয়ানক যন্ত্রণা অনুভব হবে। হুডি পরিধেয় লোকটির ডান হাতে ধরে আছে একটি ধারালো ব্লেড। যআ রুমে থাকা ড্রিম লাইটের আলোতে চকচক করছে। অপর হাতে ধরে আছে লবণের প্যাকেট। ডান হাত উঁচু করে ব্লেডের ধারালো অংশ দিয়ে কেটে ফেললেন লবণের প্যাকেট। ড্রিম লাইটের আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে দু'হাতেই গ্লাভস পরিধান করে আছেন তিনি। ব্লেডটা নিজের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাতটি লবণের প্যাকেট ঢুকিয়ে একমুঠো পরিমাণ লবণ বের করে আনলেন। চিত হয়ে শুয়ে কাতরাতে ছিলেন সাদিক। চেয়ারে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন হুডি পরিধেয় লোকটি। ডান হাতটি সাদিকের দেহের উপর এনে ছিটিয়ে দিতে লাগলেন লবণ। চিৎকার করতে লাগলেন সাদিক। কিন্তু বিন্দু পরিমাণ মায়া অনুভব হলো না হুডি পরিধেয় লোকটির মনের কোণে। হাত জোর করে মাফ চাইতে লাগলেন সাদিক। কিন্তু সেদিকের দিকে বিন্দু পরিমাণ ধ্যান দিলেন না হুডি পরিধেয় লোকটি। কিসের এতো রাগ আর কীসের শত্রুতা আর কোনোই বা তাকে শাস্তি দিচ্ছে প্রশ্নগুলো করার সময় আর পেল না সাদিক। ডান পা উঁচিয়ে নিম্নাঙ্গে স্ব—জোরে একটি লাথি দিলেন হুডি পরিধেয় লোকটি। ওঁক করে মুখ দিয়ে একটি আওয়াজ তুলে কাঁপতে লাগল সাদিকের দেহটা। ধীরে ধীরে নিশ্বাস ভারী হতে লাগল তার। দু—চোখ দিয়ে কেবল অন্ধকার দেখছেন তিনি। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। ব্লেড এবং ছুরি মেঝেতে রেখে ডান হাতের শাহাদাত আঙুলে একটি চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে সাদিকের বাসা ত্যাগ করতে লাগলেন হুডি পরিধেয় অজ্ঞাত লোক। শুনশান রাস্তা, লোকালয় হলেও কোনো মানবজাতির দেখা নেই। আর না দেখা পাবারই কথা। রাত তো আর কম হয়নি। হাত থেকে গ্লাভস গুলো খুলে ফেললেন তিনি। অতঃপর রাস্তার পাশে একটি স্থানে ফেলে দিলেন। তবে তার আগেই পকেট থেকে লাইটারটি বের করে আগুন জ্বালিয়ে দিলেন তাতে। অতঃপর ছুড়ে ফেলে দিলেন রাস্তার এক পৃষ্ঠে। গ্লাভসটি প্লাস্টিকের হওয়ায় আগুন জ্বলতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হলো না। তবে হাতে থাকা প্লাস্টিকের গ্লাভসটি ছুড়ে ফেলে দিলেও তা এখনো নিভে যায়নি। মাটির সংস্পর্শ পেয়ে পুনরায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই সেখানে পরে রইলো কেবল প্লাস্টিক গলে যাওয়া অংশগুলো। সেদিকে ধ্যান না দিয়ে রাস্তা দিয়ে তেমন কোনো কথা না বলে একাধারে হেঁটে চলেছেন তিনি। ঠকঠক করে পায়ে পরিধানকৃত বুটের আওয়াজ তুলে হেঁটে চলেছেন আপন মনে। সেই সাথে গুনগুন করে জাতীয় কবি "কাজী নজরুল ইসলামের" রচিত "মানুষ" কবিতাটা বলতে বলতে হেঁটে চলেছেন। কবি "কাজী নজরুল ইসলামের" রচিত "মানুষ" কবিতাটা বলা শেষ হলেই নতুন একটি কবিতা ধরলেন। তবে সেটি বেশ উদ্ভট বলা যায়। উদ্ভট কবিতাটি গুনগুন করে পাঠ করতে করতে পথ চলতে লাগলেন।; রক্তের স্নিগ্ধ মাখা ঘ্রাণে, মাতাল আমি হই। ভয় ঢুকে যাচ্ছে জনগণের প্রাণে, আমি যে তাদের মনেই রই। চলছে দিন চলছে রাত, ভয়ের আঘাত লোক হবে আক্রান্ত। আমি তো করেই যাবো আঘাত, আমাকে পাকড়াও করার আগ পর্যন্ত। বেদনা যুক্ত মৃত্যু দেব আমি, তাতেই যে মিলবে আমার মনে শান্তি। কেউ নেই যে আমার সমকামী, নিরাপত্তা কর্মীরা পাচ্ছে না ক্লান্তি।