ইসলাম ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য হলো, আকীদা-বিশ্বাসের পরিশুদ্ধতা। ইসলাম গ্রহণের পর সর্বপ্রথম আকীদা-বিশ্বাস সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে খুবই তাকীদ করা হয়েছে। সাইয়েদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সকল নবীই ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত এক সুনির্দিষ্ট আকীদা এবং এক সুনির্ধারিত বিশ্বাসের প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন। এর বিপরীত কোনো চিন্তা বা দর্শনের সাথে তারা সহমত পোষণ করেননি। উৎকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টতর আদর্শিক জীবনাচার, সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জনকারী কোনো ব্যক্তি কিংবা সৎকর্মশীল, সমাজসংস্কারক কিংবা দর্শনশাস্ত্রের কোনো প্রবাদ পুরুষ- কেউই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। গ্রহণযোগ্য ছিল না তাদের উদ্ভাবিত উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থা, সুন্দর সমাজব্যবস্থা কিংবা যুগান্তকারী কোনো বিপ্লবও। যতক্ষণ না তারা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম আনীত ঐশী আকীদা-বিশ্বাসের সাথে সহমত পোষণ করত। এবং যতক্ষণ না এই বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসই তাদের সকল চেষ্টা ও উদ্যোগের মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য হতো। আর বিশুদ্ধ বিশ্বাসের এই ভিত্তিটিই হলো ইসলাম ধর্মের স্বাতন্ত্র্যের সমুজ্জ্বল সীমারেখা।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।