স। ম্পা। দ। কী য় বিশ্বজিৎ চৌধুরী (জন্ম ১৯৬০) সমকালের স্বনামধন্য কথাকোবিদ। বিষয় নির্বাচনে, পরিবেশ রূপায়ণে ও বয়ানের সৌকর্যে তাঁর গদ্য স্বতন্ত্র স্বরে বিশিষ্ট। নাগরিক জীবনাভিজ্ঞতা তাঁর কথাসাহিত্যের মূলসুর হলেও পাহাড়, সমতল, উপকূলবাসী প্রান্তজনের মর্মবেদনা উদঘাটনে তিনি সমান পারদর্শী। কবি, ছড়াশিল্পী, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সাংবাদিক হিসেবে সাধারণ্যে মশহুর হয়েও কথাশিল্পী তকমাটিই এখন বিশ্বজিতের মুখ্য পরিচয়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও তৎসংশ্লিষ্ট তিন রমণী- নার্গিস, ফজিলাতুন্নেসা ও আশালতাকে নিয়ে তিনি লিখেছেন ইতিহাসনিষ্ঠ তিনটি উপন্যাস। এই ট্রিলজির কারণে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিশ্বজিৎ চৌধুরীকে নিয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থসম্পাদনার উদ্যোগ নিছক সপ্রশংস আবেগের রঙিন উচ্ছ্বাস নয় বরং তাঁর বৈচিত্র্যময় রচনাসম্ভারের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সৃজনকীর্তির স্বীকৃতিদান। তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে গ্রন্থ করার বিষয়টি ঘটনাক্রমে শুরু হয়েছে। কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বাতিঘরকেন্দ্রিক এক আড্ডায় নানা কথার ফাঁকে কবি মাঈন উদ্দিন জাহেদ বিস্ময়কণ্ঠে বললেন- আমরা তাঁকে সংবর্ধনা দিচ্ছি না কেন? শামসুদ্দীন শিশির সায় দিলেন, সেটা তো দিতেই হবে। বড্ড দেরি হয়ে গেছে। তাহলে হল ভাড়া করে ফেলি? অতিথি কারা হবে সেটাও নির্ধারণ করি। তসলিম মুহম্মদ বললেন- বিশুদার লেখালেখি নিয়ে একটা প্রবন্ধ পাঠের ব্যবস্থাও থাকুক। পাশাপাশি শোনা হলো নানা জনের নানা মত। আমি বলি- বক্তৃতা ভেসে যায় ইথারে, টিকে থাকে মুদ্রিত উপাদান। আমার প্রস্তাব- বিশ্বজিৎ চৌধুরীর কথাসাহিত্য নিয়ে একটা সংকলন হতে পারে। আড্ডারুরা গলা মেলায় সমস্বরে- হতেই পারে, হতেই পারে। ব্যাস! উলালী বুড়ির পিঠে পড়ে ঢোলের বাড়ি। সবাই আমাকেই চেপে চুপে কাজটি করতে বাধ্য করে। আমরা বিশ্বজিৎকে না জানিয়ে লেখা সংগ্রহ শুরু করি। আশঙ্কা, যদি আগ্রহ থিতিয়ে যায়! ‘আমাদের নির্ধারণ করে দেয়া বিষয়ে’ লেখকগণ যদি না লিখেন! ঘটনা সেই রকমই ঘটে। ডজনখানেক লেখা যোগাড় করতেই নাভিশ্বাস ওঠে। মাসছয়েক পরে জানতে পারি জনৈক ছোটকাগজ সম্পাদক তাঁকে নিয়ে বিশালকায় স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনার কাজ ইতোমধ্য শেষ করে প্রকাশের অপেক্ষায় আছেন। জেনে কিছুটা আশাহত হই। তাহলে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় কাজ কী? কিন্তু শিশির, মাঈনু, তসলিম প্রমুখের বিরামহীন তাড়ায় অবশেষে ছাপাখানার ঝক্কি, বাঁধাই ঘরের হুড়োহুড়ি পেরিয়ে আলোর মুখ দেখলো গ্রন্থটি। বাংলা কথাসাহিত্যের বরপুত্র বিশ্বজিৎ চৌধুরী ছড়া ও কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও কথাসাহিত্যই তাঁর সৃজনচর্চার মূলক্ষেত্র। তাঁর লেখালেখি বিষয়ে ইতঃপূর্বে অনেকেই লিখেছেন। আমরা চেয়েছি বিষয়ভিত্তিক নতুন লেখা। লেখকদের স্বাধীনতা না দিয়ে সম্পাদকীয় ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছি। এতে কিছুটা মনঃক্ষুণ্নের অবতারণা হলেও প্রায় সবাই সোৎসাহে নতুন লেখা দিয়েছেন। অতল শ্রদ্ধা সকল লেখকের প্রতি। আলোচ্য গ্রন্থে তাঁর ছড়া’র গল্প ও কবিতার বিষয়-আশয় নিয়ে দুটো প্রবন্ধ লিখে দিয়েছেন কবি ওমর কায়সার ও কবি সেলিনা শেলী। তাঁর বাল্যসুহৃদ ও লেখালেখির সঙ্গী কবি অজয় দাশগুপ্ত থেকে পেয়েছি স্বল্পদৈর্ঘ্যের স্মৃতিগদ্য। ড. শামসুদ্দীন শিশির বিশ্বজিৎ চৌধুরীর এক নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। নান্দনিক প্রচ্ছদ এঁকেছেন বিশ্বজিৎ তলাপাত্র। এই পাঁচ ব্যক্তিত্ব স্ব স্ব ক্ষেত্রে কৃতিজন। তাঁরা ধন্যবাদের তোয়াক্কাই করেন না। তবে লেখা বুননে ইয়াছিন, ছাপাখানার জাহাঙ্গীর আর বাঁধাইঘরের হানিফ প্রযত্ন অস্বীকার করি কী করে? ‘আপন আলো’ দুর্মূল্যের বাজারে বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ায় অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। আজাদ বুলবুল চট্টগ্রাম ১ বৈশাখ ১৪৩০ ১৪ এপ্রিল ২০২৩
আজাদ বুলবুল একাধারে শিক্ষক, গবেষক, কথাসাহিত্যিক, বাচিকশিল্পী ও শিক্ষা প্রশাসক। জন্ম- ১৯৬৫ সালের ১ নভেম্বর, নোয়াখালী জেলার চাটখিলের রামনারায়ণপুরে। বাংলা সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর, এম ফিল ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে রাঙ্গামাটি মহিলা কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ও গাছবাড়িয়া কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। কর্মজীবনের সূচনা সাংবাদিকতা দিয়ে হলেও পানছড়ি কলেজে শিক্ষকতাকালে অরণ্যচারী আদিবাসী অন্ত্যজদের জীবনালেখ্য রূপায়ণে নিবিষ্ট হয়ে ওঠেন। আশির দশকের মধ্যভাগে লেখালেখি শুরু করলেও প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত ১৯৯৯ সালে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ, বসবাসরত জনজাতির। ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘হালদা’ চলচ্চিত্রের কাহিনি রচনার জন্য তিনি ২০১৭ সালের সেরা কাহিনিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৮ সালে প্রকাশিত তার মহাকাব্যিক উপন্যাস ‘অগ্নিকোণ’ দেশে বিদেশে। বিপুলভাবে সমাদৃত হয়। আজাদ বুলবুলের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২টি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৫ বছর শিক্ষকতা করার পর ২০১৬ সালে তিনি শিক্ষা প্রশাসনে যােগ দেন। তাঁর বিদ্যায়তনিক নাম ড. গাজী গোলাম মাওলা। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন।