জাতিসংঘ একটি বিশাল ব্যাপার। হিমালয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তাই যেমনি এর পরিমাণ পরিমাপ করা যায় না-কেবল এর বিরাটত্বে, বিশালত্বে বিস্মিত হতে হয়-এই গ্রন্থের হয়েছে। বিকাশের ধারাবাহিকতা অনেকাংশে সজ্ঞানে রেখে চলা হলেও উল্লিখিত বিষয়বস্তুগুলো কেবলি রূপরেখা সমতুল্য, পূর্ণাঙ্গ বিষয়ের মাপকাঠিতে সমুদ্রে বারিবিন্দুবৎ। সার্বিক অবয়বে জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ কর্মকাণ্ডের বস্তুনিষ্ঠ আলেখ্য তুলে ধরা একটি অতীব দুরূহ কাজ। অস্বীকার করার উপায় নেই, যতই দিন যাচ্ছে-জাতিসংঘ বিশ্ব-মানবগোষ্ঠীর একটি প্রতিভূতে পরিণত হচ্ছে। সেই প্রতিভূ আরো বিকশিত হবে, সত্য হবে, সুন্দর হবে-বিশ্ব-মানবগোষ্ঠীর এটাই কামনা। অন্যদিকে জাতিসংঘ ও বিশ্ববাসীর সামনে-বিশেষ করে বঞ্চিত মানবতার জন্য এই রোডম্যাপই তুলে ধরছে। জাতিসংঘের এই বিশেষ ভূমিকার রূপায়ণ এই গ্রন্থের মূল উপজীব্য। জাতিসংঘের ব্যর্থতা মানবিক ব্যর্থতারই পরিচায়ক, যেমনি জাতিসংঘের সাফল্য মানবিক সাফল্যের সাক্ষ্যবহ। সেই সাফল্যের দিকে জাতিসংঘের অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য-এর চলার পক্ষে যতই বাধার পাহাড় রচনা করা হোক-না কেন। মানুষ মানুষের মুক্তিকে অবশ্য অব্যশ্যম্ভাবী করে তুলবে।
কবি-লেখক-সাংবাদিক ও ভাষাসংগ্রামী তােফাজ্জল হােসেন-এর জন্ম ৯ই অক্টোবর, ১৯৩৫-এ কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামের সম্রান্ত মিঞা পরিবারে। পিতা : পান্দে আলী মিঞা, মাতা : মঞ্জুরা বানু। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল থেকে মেট্রিক, জে. এন. কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ও এমএ। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ। কলম্বাে পরিকল্পনা বৃত্তির। অধীনে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনায় অধ্যয়ন । বিভিন্ন ভূমিকায় বহু দেশ ভ্রমণ । শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি দৈনিক ইত্তেফাকের সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ১৯৫৪-য় । দীর্ঘকাল দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র ও তথ্য সার্ভিসে দায়িত্ব পালন শেষে সরকারি চাকরিতে যােগ দেন। ১৯৬৭-তে। বিসিএস তথ্য (সাধারণ) সার্ভিসের সিনিয়র সদস্য হিসেবে তথ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বিভিন্ন পদ ও তথ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্তকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ পরিষদের পরিচালক হিসেবে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। সংবাদপত্র বেতন বাের্ডের দুই দফা সচিব, এ.বি.সি’র কন্ট্রোলার এবং তথ্য মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও সার্ক-এর প্রথম ও প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে যুগ্ম মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। গণমাধ্যমে উন্নয়ন যােগাযােগ সেল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন । ক্রীড়া, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতাসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পঞ্চাশের দশক থেকে প্রায় ছয় দশক বলিষ্ঠ পদচারণা । মুকুল ফৌজ, আজাদ স্পাের্টিং ক্লাব, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, শিশু কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি, সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট প্রভৃতি। সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি, অজিত গুহ স্মৃতি পরিষদ, মােহাম্মদ মােদাব্বের-হােসনে আরা স্মৃতি সংসদ ও আজাদ স্পাের্টিং ক্লাবের সহ-সভাপতি এবং ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বাের্ড, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বাের্ড, জুরী বাের্ড ও স্ক্রিপ্ট কমিটির সাবেক সদস্য এবং দৈনিক ভােরের কাগজের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান গ্রন্থটি ছাড়াও হৃদয় রক্তরাগে’, ‘একুশ ভুবনময়’, ‘নতুন যুগের ভােরে, কবিতাসমগ্র, প্রগতিশীল রুশ ও উর্দু কবিতা (অনুবাদ) কাব্যগ্রন্থসহ আরাে বেশ। কয়েকটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থের (১. জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও আগামী পৃথিবী, ২. শিশু : বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট, ৩. বিপন্ন পৃথিবী বিপন্ন জনপদ, ৪. কাশ্মীর : ইতিহাস কথা কয়) প্রণেতা। সংগীত এবং অন্যান্য সৃষ্টিশীল সাহিত্যেও সমান কৃতী । ১৯৫৩ সালে কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত অমর একুশে ফেব্রুয়ারী’ সংকলনে ঐতিহাসিক যে দু’টি গান সংকলিত হয়েছিল তার একটির রচয়িতা। কয়েকটি দেশি ইনস্টিটিউটের অনিয়মিত প্রশিক্ষক ছাড়াও তিনি কুয়ালালামপুর এআইবিডি’র প্রশিক্ষক হিসেবে কয়েক দফা স্বল্পমেয়াদী দায়িত্ব পালন করেন । এছাড়া তিনি বিশ্বব্যাংক ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট এবং বিআইডিএস-এর ফেলাে। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভাষাসৈনিক সম্মাননা, জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মাননা ও ঋষিজ পদক এবং একুশে পদক ২০১৩ পেয়েছেন।