ঘরের দরােজা খুললেই সামনে বড় ছাদ। খােলা দরােজার সামনে চেয়ার টেনে বসে ছিলেন আলতাফ হােসেন। দূর আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন তিনি। তিনি এতটাই স্থির ছিলেন, তাকে ওই বিশাল ছাদের অংশবিশেষ মনে হচ্ছিল। সকালের এই সময়টায় সাধারণত ছাদে কেউ আসে না। ছাদে একাকী বসে থাকার জন্য এ সময়টা আলতাফ হােসেনের তাই খুব পছন্দ। প্রতিদিন তিনি ঘরের দরােজা খুলে চেয়ার টেনে বসে পড়েন, এমন নয়। কোনাে কোনােদিন এক মুহূর্তের জন্যও ঘর থেকে বের হন না। সেদিন তার খাবার আসে নিচ থেকে। বাধা-ধরা সময় আছে, ওই সময়ের মধ্যে নিচে না নামলে ধরে নেয়া হয় তিনি আজ আর নামবেন তখন নিচ থেকে কাজের লােক খাবার নিয়ে আসে, আবার কিছুক্ষণ পরে এসে প্লেট, পেয়ালা এসব নিয়ে যায়। রাতেও এই ব্যবস্থা। বিকালে কিংবা সন্ধ্যার আগে এ বাড়িতে বড় করে নাস্তার আয়ােজন থাকে। আলতাফ হােসেনের জন্য সে নাস্তার প্রয়ােজন নেই। তিনি স্বল্পাহারী। তার বন্ধু ও আত্মীয়, এ বাড়ির কর্তা জাহিদুর রহমান তার আহারের পরিমাণ দেখে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যান আলতাফ, বলাে তাে ওটুকু খেয়ে কী করে আছ ? এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে আলতাফ হােসেন সামান্য হাসেন আছি। আছ যে, সে দেখতেই পাচ্ছি। কেমন করে?এটা অভ্যেসের ব্যাপার জাহিদ। আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। আর আমার ব্যাপারটা দেখাে তুমি। খাওয়ার সময়ের কথা বলছি যত খাই,মনে হয় আরও খাই। এ কথার পিঠে কিছু বলার নেই। আলতাফ হােসেন তাই অল্প-অল্প হাসেন। কোন অসুখটা নেই আমার ডাক্তার বারবার বলে কমিয়ে দাও না কেন? ওই যে বললাম পেট ভরে চোখ ভরে না।
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।