বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া কমলাসুন্দরী অপরূপা। রূপ যার প্রধান শত্রু। যার কটাক্ষে, ভঙ্গিতে, রহস্যে রূপের বিস্তার, শতচ্ছিন্ন দারিদ্র্য ছাপিয়ে একটি গ্রামের অঞ্চলে অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে যার রূপ, সে-ই কমলা, যে বড় হয়েছে রানী কমলার কাহিনী পড়ে। আশ্চর্য কমলার চরিত্র! প্রভাবশালী, গ্রামের অন্যান্য যুবকদের হাতছানি উপেক্ষা করে হিন্দু হয়েও প্রেমে পড়ে হতদরিদ্র এক মুসলমান ছেলের। সেই সর্বনাশা রূপরাক্ষসী একদিন কমলাকে টেনে নিয়ে যায় কোন অন্ধকারে, কেউ তা জানে না। গাঙের জলে ভেসে ওঠে লাশ। উপন্যাসের শুরু সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্ত থেকে, যার লাল রক্তবর্ণ আলোর পথ ধরে ফিরে আসছে হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণ সজ্জিতা, বর্ণাঢ্য কমলা সুন্দরী। উপন্যাসটি একরৈখিক নয়। বিভিন্ন মানুষের জীবন নিয়ে খণ্ড খণ্ড ছোট পর্ব এতে বিদ্যমান ফলে বিভিন্ন জায়গায় নানা বিস্তারের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অহেতুক উপন্যাসকে দীর্ঘ করার প্রবণতায় না গিয়ে একে সীমিত রাখা হয়েছে। পেঁচা-বুড়ি প্রতিটি ঘরে- বাইরের আঙিনায় আছড়ে পড়ে পড়ে জানায় কমলা অথবা তার প্রেতাত্মার ফিরে আসার বর্ণনা। স্তব্ধ হয়ে যায় গ্রামবাসী। সাপের মতো রক্তের কুণ্ডলী ছড়ানো আলোকে নিভিয়ে সূর্য অস্ত যেতেই উপন্যাসটির সমাপ্তি ঘটে।
নাসরীন জাহান ১৯৬৪ সালে ৫ মার্চ বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, এবং সাহিত্য সম্পাদক। আশির দশকের শুরু থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার বাবা গোলাম আম্বিয়া ফকির ছিলেন সরকারী চাকুরিজীবী ও মা উম্মে সালমা ছিলেন গৃহিণী। বাবার চাকরীর কারণে থাকতেন মামাবাড়িতে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে তাকে আর তার ভাইকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের এক মামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে ভর্তি হন শানকিপাড়া স্কুলে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকতেন ফুফুর বাড়িতে। ফুফুর এক মেয়ে ছিল শবনম জাহান। ফুফু তার নামের সাথে মিল রেখে মা-বাবার দেয়া নাম নাসরীন সুলতানা পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন নাসরীন জাহান। স্কুলে পড়াকালীন পারভিন সুলতানা নামে এক বন্ধুর সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। সে বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ ভর্তি হলে তিনিও একই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে শিশু একাডেমি থেকে লেখা চাওয়া হলে দুই বান্ধবী লেখা পাঠায়। দুজনের লেখা প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। ব্যক্তিগত জীবনে নাসরীন জাহান কবি আশরাফ আহমেদের স্ত্রী। লেখালেখির সূত্রেই তার সাথে পরিচয় এবং সে থেকে প্রণয়। ১৯৮৩ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের এক মেয়ে। নাম অর্চি অতন্দ্রিলা। নাসরীন জাহান পাক্ষিক পত্রিকা অন্যদিনের সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি উড়ুক্কু উপন্যাসের জন্য ১৯৯৪ সালে ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।