ফ্লাপের কথাঃ ১৯৮৯--এ যখন অরুণিমা নামে একটি ছােটো সাময়িকীতে হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ বেরােয়, দেশ জুড়ে সাড়া পড়ে। একটি প্রথাগত সমাজ হঠাৎ ঘা খেয়ে চিৎকার করে ওঠে। মেতে। ওঠে প্রতিক্রিয়াশীলবর্গ হুমায়ুন আজাদকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যে। তার অপরাধ তিনি প্রকাশ করেছেন নিষিদ্ধ সত্য। বাঙলায় প্রবচন রচনার কোনাে ঐতিহ্য নেই, হুমায়ুন আজাদ সৃষ্টি করেছেন সে-ঐতিহ্য। তাঁর সংহত, তীব্র, মর্মভেদী অপ্রথাগত প্রবচনগুচ্ছে ধরা পড়েছে বাঙলার আন্তর রূপ, যা অশুভ। হুমায়ুন ' আজাদ পচে যাওয়া ভালাে ভালাে কথা বলেন নি, বলেছেন। নির্মম সত্য; সত্য প্রকাশ করেছেন শােধিত মুক্তোর মতাে নিটোল বাক্যেএর মাঝেই তার অনেক প্রবচন পরিণত হয়েছে সমকালীন প্রবাদে, ফিরছে তরুণদের মুখে মুখে তার শেষবিদ্যুতে ঝলসে উঠছে চারপাশ। সত্যপ্রিয় যারা, তাদের সঙ্গী হয়ে থাকবে হুমায়ুন আজাদের সত্যভাষী এ-প্রবচনগুচ্ছ। বাঙলায় ' লা রশফোকো নেই আছেন হুমায়ুন আজাদ প্রথম সংস্করণ। সংশােধন করে ৪৪টি নতুন প্রবচনসহ এ-বছরই প্রকাশিত হয়েছিলাে সংশােধিত পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ। এবার প্রকাশিত হলাে জনপ্রিয় প্রবচনগুচ্ছের শােভন সংস্করণ।
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভীষ্ট এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক এই লেখক একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে রাঢ়িখাল গ্রামে, যার কথা পরবর্তীতে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমূহ নারীবাদকে তুলে ধরেছে ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রবল বিরোধিতা করেছে, যার ফলে তিনি একশ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই এর মধ্যে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ', 'সব কিছু ভেঙে পড়ে', 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অলৌকিক স্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'নারী' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দেশে। প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক' সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন হুমায়ুন আজাদ।