'নারী পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার সবচেয়ে সপ্রাণ বস্তু। পুরুষ নারীকে আজো বস্তু, উপভোগ্যতম বস্তু বলেই গণ্য করে। দিকে দিকে তাকে নিষিদ্ধ করে রাখতে চায় এবং তার জন্য নিষিদ্ধ রাখতে চায় সব কিছু। হুমায়ুন আজাদ স্যারের মতো আমিও বিশ্বাস করি নিরন্তর বিকশিত হওয়ার নামই মনুষ্যত্ব। এ বইয়ে নারীর প্রতি নানা অনাচার, অত্যাচার, নির্যাতন, বৈষম্য নিয়ে আইনাঙ্গনের কিছু গল্প ও আইনি সমাধানের চেষ্টা মাত্র। কোন দীর্ঘ ও গভীর গবেষণার ফসল এটা নয়। একজন আইনজীবী এবং আইন সাংবাদিক হিসেবে সমস্ত সীমাবদ্ধতা নিয়ে আইনাঙ্গনে যেটুকু বুঝতে পেরেছি, অনুভব করেছি, প্রত্যক্ষ করেছি, প্রয়োগ করেছি সেসব নিয়েই নিবন্ধগুলো লিখেছি। খুঁটে খুঁটে জানতে চেষ্টা করেছি আইনাঙ্গনে আসা নারীদের জীবনচিত্র, তাদের ভোগান্তির কথা, কষ্টের কথা, অভিজ্ঞতার কথা। মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে, তালাক, দেনমোহর, হত্যা, ধর্ষণ, যৌতুক ইত্যাদি বিষয়গুলো নানা অনুষঙ্গ হয়ে আমার হৃদয়ে ধরা দিয়েছে। জানি, স্বল্প সময়ে একজন মানুষের জীবনের সবটুকু জানা যায় না। একজনের হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা অজানা কথা আরেকজন পুরোপুরি বলতে পারে না। তারপরও আমি যাঁদের কথা বলতে চেষ্টা করেছি, সে ধৃষ্টতার জন্য তাঁদের কাছে ক্ষমা চাই। প্রতিটি লেখায় সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে ভূক্তভোগীদের নাম গোপন রাখা হয়েছে। আইনের ভাষা কিছুটা জটিল, তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সহজ, বোধগম্য ভাষায় বইটি লেখার জন্য। যাদের জন্য বইটি লেখা, তারা উপকৃত হলে আমার শ্রম সার্থক হবে বলে আশা করি। বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে যে সমস্ত লেখকের লেখা বই থেকে অকুণ্ঠচিত্তে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তথ্য গ্রহণ ও অনুসরণ করেছি, যে সমস্ত জার্নাল থেকে কেস ল, কেস স্টাডি ও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাঁদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতাবোধ। পরবর্তীতে বইটির মানোন্নয়নের জন্য সুচিন্তিত পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করব।