দেওয়ানী মোকদ্দমার পক্ষ কর্তৃক সাক্ষীকে সাক্ষ্যদানের জন্য যে আহ্বান করা হয়, তাহাই হইল জবানবন্দি (Examination in chief)। ১৯০৮ ইং সনের দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ আদেশ এবং ১৮৭২ ইং সনের সাক্ষ্য আইনের ১৩৭ ধারায় জবানবন্দির কথা বলা হইয়াছে। মোকদ্দমার কোন পক্ষ তাহার মোকদ্দমা প্রমাণের জন্য সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করিয়া যে বক্তব্য প্রদান করেন তাহাই হইল জবানবন্দি। জবানবন্দি হইল বাদীর আরজি ও বিবাদীর জবাবের বক্তব্যগুলি বিজ্ঞ আদালতের নিকট উপস্থাপন করা এবং ঐগুলির সত্যতা পরীক্ষা করা। এই জন্য ইংরেজিতে জবানবন্দিকে বলা হয় Examination in chief। জবানবন্দির মাধ্যমে মামলার পক্ষ তাহার আরজি বা জবাবে বর্ণিত বিষয়গুলির তথ্য হাজির করা। ইহার পরেই বিপক্ষদলের জেরার কাজ শুরু হয়। দেওয়ানী মোকদ্দমার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হইল সাক্ষীর জবানবন্দি। সাক্ষীগণের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় জবানবন্দির মাধ্যমে। তাই জবানবন্দির গুরুত্ব অনেক। সাক্ষী বিজ্ঞ আদালতে দাঁড়াইয়া যে বক্তব্য প্রদান করেন তাহা হইল একটা আর্ট বা কথা। একজন আইনজীবীকে তাহার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে এই জবানবন্দির কথা আয়ত্ত করিতে হয়। জবানবন্দির মাধ্যমেই বাদীপক্ষের P.W-1 (Plaintiff witness No.1) মোকদ্দমায় বিস্তারিত বিবরণ বিজ্ঞ আদালতের নিকট উপস্থাপন করেন। একজন আইনজীবীর দায়িত্ব হইল তাহার পক্ষের মোকদ্দমার বিষয়বস্তু প্রমাণস্বরূপ তাহার আরজি বা জবাবে উল্লেখিত সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞ আদালতের বিচারকের নিকট উপস্থাপন করে প্রদর্শনী চিহ্নে চিহ্নিত (Exhibit Mark) করিতে হইবে। যদি কোন কারণে বাদীর আরজিতে বর্ণিত দলিল-দস্তাবেজ বা বিবাদীর জবাবে বর্ণিত দলিল- দস্তাবেজ জবানবন্দি প্রদানকালে বাদ পড়িয়া যায় তবে পুনরায় বাদীপক্ষ বা বিবাদীপক্ষ তাহাদের প্রধান সাক্ষীকে (P.W-1 বা D.W-1) Recall করে না বলা দলিল-দস্তাবেজ দাখিল করা যায়। সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রদান করিলে এবং বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করিলে তবে উহা Public document বলিয়া বিবেচিত হইবে। বাদীপক্ষ আরজি দাখিল করিয়া তাহার মোকদ্দমার সূচনা করিলে ও যদি আরজির সমর্থনে তাহার সাক্ষ্য প্রদান না করেন তবে আরজিটি কখনো Public document হিসাবে গ্রহণ করা যায় না।
Title
দেওয়ানী মোকদ্দমার জবানবন্দি ও দলিল দস্তাবেজ প্রদর্শনীর কৌশল