চাঁদ ও অন্যান্য নভোস্থিত বস্তুসহ মহাকাশ গবেষণা ও ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা বিষয়ক চুক্তি, ১৯৬৭ (মহাকাশ চুক্তি) আন্তর্জাতিক আইনের অনন্য সংযোজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মহাকাশ দখলের যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল সে স্থানে মহাকাশ কর্মকাণ্ডে অগ্রগামী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা ও একটি বহুপাক্ষিক চুক্তিপত্র প্রণয়ন, মহাকাশ কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থ, মহাকাশের সামরিক ও অ-সামরিক ব্যবহারসহ বহু বিষয়ে ঐক্যমতের প্রয়োজন পড়ে। ১৯৬৭ সালের মহাকাশ চুক্তি সেই ঐতিহাসিক ঐক্যমতের প্রতিফলন। ১৭টি অনুচ্ছেদ বিশিষ্ট এই মৌলিক চুক্তিটিতে মহাকাশ গবেষণা ও ব্যবহারের স্বাধীনতা সকল রাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে এবং সমগ্র মানব জাতির কল্যাণে মহাকাশ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে- তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মহাকাশ ও নভোস্থিত অন্যান্য বস্তুসমূহে যেকোনো রাষ্ট্র কর্তৃক দখলদারিত্বের উপর বিধিনিষেধ আরোপ, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে মহাকাশ কর্মকাণ্ড পরিচালনা, কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে নভোস্থিত বস্তুর ব্যবহার, মানবজাতির দূত হিসেবে নভোচারীদের বিবেচনা করা, রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ও তত্ত্বাবধান অনুসারে মহাকাশ কর্মকাণ্ড পরিচালনার নির্দেশনা, মহাকাশ কর্মকাণ্ডের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যের নীতিমালা, মহাকাশ বস্তুর নিবন্ধন, পারস্পরিক সহযোগিতা ও মর্যাদার নীতি ও তথ্য আদান-প্রদানের বিধানসহ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নীতি- এই চুক্তিটিতে বর্ণিত হয়েছে। চুক্তিটি গৃহীত হওয়ার পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে মহাকাশ বিষয়ে আরো চারটি আন্তর্জাতিক চুক্তি/কনভেনশন গৃহীত হয়েছে, যেগুলো মূলতঃ ১৯৬৭ সালের মহাকাশ চুক্তির কতিপয় বিধানকে আরো সুস্পষ্ট করেছে ও আইনগত বাধ্যবাধকতা প্রদান করেছে। মহাকাশ কর্মকাণ্ডের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালনা করা ও মহাকাশে ক্ষতিকর প্রতিবন্ধকতা এড়ানোর লক্ষ্যে এই চুক্তিটি দিক নির্দেশকের ভূমিকা পালন করে চলেছে।