ব্যালকনিতে চেয়ার পেতে বসে লতিফা। শেষ বিকেলের ঝিরঝিরে বাতাসে সিরসিরে শীতের ছোঁয়া। থিরথির করে পাতা কাঁপছে দেবদারু গাছে। গাঢ় সবুজ রঙের ঢেউ খেলানো পাতার ফাঁকে ফাঁকে লুকোচুরি খেলছে সোনার কুচির মত ঝিলমিলে রোদ। একটা কাঠবেড়ালী ওঠা নামা করছে গাছটার কাণ্ড বেয়ে। আরেকটা উঁচু ডালে বসে লেজ উঁচিয়ে লক্ষ্য করছে সেটাকে। সাদা ফুলের নিশান উড়িয়েছে সজনে গাছটা। দু'টো টুনটুনি নাচছে সেখানে। আম গাছটা ছেয়ে গেছে ঝাড় ঝাড় মুকুলে। মৌমাছিদের গুনগুনানির বিরাম নেই। বাতাসে আমের মুকুলের গন্ধ। পড়ন্ত বেলার আলোছায়ায় শালিক পাখির অস্থিরতা। এক জোড়া শালিক। একবার এডালে একবার ওডালে, পরক্ষণেই নামছে মাটিতে। বেশ আছে দু'টিতে। জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন লতিফা। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাসগুলোকে মুক্তি দিতে না পারলে নির্মম অত্যাচার চলে পাঁজরের কাঠিগুলোর ওপর। তাই ব্যস্ততার ফাঁকে নির্জনতা খোঁজেন লতিফা। কেউ জানে না হরেকরকম কর্তব্য আর জীবন-সংগ্রামের মাঝখানে থেকেও কীসের খেলা চলে কর্তব্যনিষ্ঠ মধ্যবয়স্কা লতিফার মনে। বয়স তার ছয়চল্লিশ ছুঁয়েছে। মানুষ করেছেন ছেলে-মেয়ে দু'টিকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাকেও ছুটে চলতে হয়েছে। কিন্তু হাজার ছুটেও পড়ে থাকছেন কেন একই জায়গায়! স্মৃতিগুলোকে পেছনে ফেলে কেন পারছেন না এগিয়ে যেতে? কেন পালাতে পারছেন না নিজের কাছ থেকে? স্মৃতি স্মৃতি আর স্মৃতি। স্মৃতিদের মৃত্যু নেই। স্মৃতিরা কোনো সময় ছেড়ে যায় না লতিফাকে।