"বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: শিক্ষার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণেই একটি দেশের অগ্রগতির চাবিকাঠি বলে বিবেচিত হয়। সৎ ও চরিত্রবান মানবসম্পদ গড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যাপক প্রসার, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, জীবন যাত্রার মানােন্নয়ন, বিভিন্ন দলমত স্বার্থের মানুষকে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দক্ষ-সৎ ও নিষ্ঠাবান লােকবল সৃষ্টি এবং সরবরাহ প্রধানত দেশােপযােগী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরণের মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় পর্যালােচনা করে এ সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় যে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ভূমিকা যেমনি নগন্য ঠিক তেমনি এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ধর্মশাস্ত্রেও পারদর্শিতা অর্জন করছে খুবই কম। অথচ ইসলাম কেবল পারলৌকিক নয়, ইহলৌকিক ও প্রায়ােগিক শিক্ষার ওপরও সবিশেষ গুরুত্বারােপ করেছে। বাংলাদেশের ধর্মনিষ্ঠ জনগণের অনুভূতির সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বহু চড়াই ও দুর্দিন অতিক্রম করে হৃদয়বান মুসলমান ও আলিম সমাজের ত্যাগের কারণে এ ব্যবস্থাটি গুণগত না হলেও সংখ্যাগত দিক দিয়ে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপােষকতা ছাড়াই মাদ্রাসাসমূহ দীর্ঘদিন টিকেছিল। কওমী মাদ্রাসা সরকারি পৃষ্ঠপােষকতা ব্যতিরেকে টিকে আছে। তাই বলা যায়, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসার উপস্থিতি হচ্ছে বাস্তবতা। ব্যাপক জনগণের অনুভূতির পরিপুরক মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে তাই সদর্থক দৃষ্টিতে দেখে একে আরও জীবনমুখী ও কার্যকর ব্যবস্থা হিসাবে গড়ে তােলা প্রয়ােজন। প্রয়ােজন উপেক্ষা নয়- দরদী মন নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাসমূহ দূরীভূত করে এর উন্নতি সাধন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও বর্তমান চেয়ারম্যান ডক্টর হাসান মােহাম্মদ ১৯৫৪ সালে সন্দ্বীপ উপজিলার সাতঘড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা সৈয়দ আহমদ (মরহুম) একজন বিশিষ্ট আলিম, শিক্ষাবিদ ও লেখক ছিলেন। ড. হাসানের শৈশবেই তাঁর মাতা শহীদা বেগম পরলােক গমন করেন। বাংলাদেশ : ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি’ ছাড়াও ড. হাসান রচিত ও সম্পাদিত বেশ ক'টি গ্রন্থ ইতােমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েকটি গ্রন্থ। তিনি বেশ কটি সাময়িকী সম্পাদনা করেছেন (ড. হাসানের সংক্ষিপ্ত প্রকাশনা তালিকা এ গ্রন্থেও সংযােজিত রয়েছে)। প্রফেসর হাসান মােহাম্মদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এবং এ. এফ. রহমান হলের প্রভােষ্ট হিসেবেও বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসমূহের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি’র তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ড. হাসান মােহাম্মদ বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র’-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক। বাংলাদেশ সংস্কৃতি ফোরাম’-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। অনেকগুলাে জাতীয় আঞ্চলিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে ড. হাসান সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। তাঁর উদ্যোগে আয়ােজিত হয়েছে অনেকগুলাে সেমিনার-সিম্পােজিয়াম। বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখছেন। গ্রন্থণা, উপস্থাপনা এবং আলােচক হিসেবে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করে থাকেন।