"নির্বাচিত ১০০ কবিতা"বইটির প্রথমের কিছু অংশ:হুলিয়া আমি যখন বাড়িতে পৌছলুম তখন দুপুর, চতুর্দিকে চিকচিক করছে রােদুর-; শোঁ-শোঁ করছে হাওয়া। আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন একটি রেখায় এসে দাড়িয়েছে। কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে। আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে কাঁধে হাত রেখে চিৎকার করে উঠেছিল;- আমি সবাইকে মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা। তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখােমুখি বসে দূর থেকে বারবার চেয়ে দেখলেন, কিন্তু চিনতে পারলেন না। বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি, অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও রফিজ আমাকে চিনল না। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি। সে একই ভাঙাপথ, একই কালােমাটির আল ধরে গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি। আমি যখন গ্রামে পৌছলুম তখন দুপুর, আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রােদ, শোঁ-শো করছে হাওয়া। অনেক বদলে গেছে বাড়িটি, টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল, ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গােয়াল; চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনােখানে। পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লকলকে জিভ দেখালাে।
জন্ম: জুন ২১, ১৯৪৫, আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ, যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত,তিনি একজন বাংলাদেশী কবি এবং চিত্রশিল্পী। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন। তাঁর কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধীতা, এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জরপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমী , ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।