অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনগণের ভূমিকা ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সর্বজনবিদিত। সিপাহী বিদ্রোহ থেকে ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন এবং মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনে চট্টগ্রামের মানুষের ভূমিকা কিংবদন্তি হয়ে আছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পরবর্তী ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয় দফা আন্দোলনসহ সব রকম আন্দোলনে চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতা ও নেতৃত্বের সংগ্রামী ভূমিকা ছিল প্রশ্নাতীত। ছয় দফার প্রথম জনসভা ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আয়োজনের জন্য চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ২-৩ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলনেও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নেতাকর্মী, ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বেতারকর্মী, চিকিৎসক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পেশাজীবী সাধারণ শ্রমিক-ছাত্র-জনতা, স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসেন। ছিল বিভিন্ন স্থানে অবিশ্রান্ত পথসভা, মিছিল, পথসভা, মঞ্চনাটক, গণসংগীত, অস্ত্র সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে গণজাগরণ সৃষ্টি ও যুদ্ধ প্রস্তুতি । অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে সোয়াত জাহাজ থেকে বহুল আলোচিত অস্ত্র খালাসে বাধা দিতে গিয়ে বহু লোকের প্রাণহানি, একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ওয়্যারলেস এবং কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের মাধ্যমেই বহির্বিশ্বে প্রথম প্রচার এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বীর জনতার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ইতিহাসের এমন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং এতে রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সবার বীরত্বগাথার সার্বিক চিত্র এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে । পুরো আন্দোলনে শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী সাধারণ নেতাকর্মীদের একটা ফিরিস্তিও পাওয়া যাবে এ বইয়ে। বইটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, লেখক-গবেষকসহ পাঠকদের কাজে লাগবে ।
Title
বৃহত্তর চট্টগ্রামে অসহযোগ আন্দোলনের রক্তঝরা দিনগুলি
জন্ম ১৮ অক্টোবর ১৯৫৬ সালে, চট্টগ্রামের পটিয়া। উপজেলার আল্লাই (কাগজিপাড়া) গ্রামে। বাবা মৌলভি নুরুল হক ও মা নূর খাতুন। ৭৭ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক জমানার হাত ধরে সাংবাদিকতার শুরু | জাতীয় দৈনিক প্রথম আলাের জন্মলগ্নে যুক্ত হয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর পদত্যাগ। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা এবং লেখালেখিতে নিয়ােজিত। গত সাড়ে ৫ বছর ধরে প্রকাশ করছেন গবেষণামূলক সাময়িকী ইতিহাসের খসড়া। তিনি ১৯৭৭-৭৯ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ মহকুমা (পটিয়া) । প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোক্তা-সংগঠক এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সােসাইটির সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি, চট্টগ্রাম জেলা । কমিটির সভাপতি এবং খেলাঘর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির সহসভাপতি। তিনি একজন প্রাবন্ধিকও। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধনিবন্ধ প্রায় চারশ। প্রকাশিত গ্রন্থ ৮টি। মুহাম্মদ শামসুল হক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন। স্বাধীনতার বিপ্লবী অধ্যায়-বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য-৪৭-৭১ গ্রন্থটি ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম । প্রেস ক্লাব আয়ােজিত বই প্রতিযােগিতায় । গবেষণা-সাহিত্যে সেরা গ্রন্থ নির্বাচিত হয় এবং তিনি সেরা লেখক-সাংবাদিক পুরস্কার পান।। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপােরেশন তাকে 'একুশে স্মারক সম্মাননা পদক প্রদান করে।