গ্রামের নাম লোন্দা। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের এই গ্রাম। ইউনিয়ন: ধানখালী, উপজেলা: কলাপাড়া, জেলা: পটুয়াখালী। কী আছে সেই গ্রামে? লেখক রেজাউল বাহারের কলমেই জানা যাক — “গ্রামের নাম লোন্দা। বইটা কোনো সাহিত্যচর্চা নয়। এখানে গল্পের কোনো শুরু বা শেষ নেই। যা কিছু আছে, হয়তো অনুভূতি। অনুভূতি অনুভবের, প্রকাশের নয়। প্রকাশের সামর্থ্য আমাদের দেওয়া হয়নি। লেখার কোথাও ভেজা চোখ, মুছে আবার লিখতে বসা; আমার আনন্দ এটুকুই। হিমালয় আমি দেখিনি, হিমালয়ের শেষ দেখেছি। শেষটা এখানে। সীমানাহীন অভয়া নদী আর সাগরের কাছ ঘেঁষেই লোন্দা গ্রাম। কী আছে এখানে জানি না। শুধু আমি জানি এক টুকরো স্বর্গ এখানে। পৃথিবীর বহু প্রান্তে আমি সূর্য দেখেছি, সূর্যের রং দেখিনি। রংটা যেন এখানে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার ভালো লাগার প্রতিটা মানুষকে আমি নিয়ে যাব লোন্দায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, লোন্দার পথ ধরে চলে যাওয়া প্রতিটা মানুষই আমার ভালো লাগার একজন। পেশায় আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকাতেই বড় হয়ে ওঠা। স্কুল—ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল। কলেজ নটর ডেম, ইউনিভার্সিটি বুয়েট। বুয়েটের শেষ দিকে ট্রান্সফার হয়ে চলে আসি আমেরিকার নিউ ইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। বিএসসি শেষ করে মাস্টার্স। তারপর এখানেই থেকে যাওয়া। প্রায় প্রতিবছরই দেশে যাই। মাঝে মাঝে লোন্দা ঘুরে আসি। পেশায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি আমি একজন পর্যটক। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তে আমার পা পড়েছে, দেখা হয়েছে সব মহাদেশ। আমরা ছয় ভাই-বোন, আমিই ছোট। আমিসহ চারজন পাড়ি জমিয়েছে দেশের বাইরে। বড় আপা, বড় ভাই আছেন দেশে। বাবা চাকরি করতেন বুয়েটে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে প্রায় তিন দশক ছিলেন সার্ভেয়িং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে। মা সংসার দেখতেন। যতটা মনে পড়ে, আশির দশকের শুরু থেকে আমরা বড় হয়েছি একটা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। বেশ টানাহেঁচড়ার সংসার। বছরের খোরাকির (ধান-চাল) জন্য নির্ভর করতে হতো লোন্দা গ্রামের ওপর। লোন্দা আমাদের দাদাবাড়ি। সেখানে কিছু ধানি জমি আছে। চাচা থাকেন গ্রামে। আমরা বছর শেষে ধান থেকে চাল করে নিয়ে আসি। স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতো ডিসেম্বরে। তারপর মায়ের সঙ্গে গ্রামে যেতাম আমি। থাকতাম মাসখানেক, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। হাজারো মাইল দূর থেকে আমি ভাবি লোন্দার কথা, লোন্দার মানুষের কথা। পুরনো স্মৃতি, ফেলে আসা জীবন, মা-বাবার চলে যাওয়া — এসবই এই লেখার মূল অংশ।”