সালটা ১৯৮৯-৯০, কলকাতার তিনশো বছর পূর্তি চলছে। সত্যজিৎ রায় সত্তর বছরের যুবক। হঠাৎ এক কলেজ পড়ুয়া ঠিক করে ফেললেন রায় বাবু কে নিয়ে একটা বই বার করবেন। হ্যাঁ, নব্বইয়ের দশকে একজন জীবিত ব্যক্তিকে নিয়ে বাংলায় একটা বই, যা তখনকার দিনে এক বিরল ঘটনা। ঠিক করলেন তাঁকে নিবেদিত ছড়া, কবিতা এবং চিত্রশিল্পের এক সংকলন বানাবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ, শুরু হলো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, কবি, লেখক, চিত্রশিল্পীদের বাড়িতে সেই কলেজ পড়ুয়ার যাতায়াত। এরপর কিভাবে সেই সংকলন তৈরী হলো, কিভাবে সেই বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকলেন গণেশ পাইন, সেটা নিজেই একটা ইতিহাস। তৈরী হলো রায়মঙ্গল। সেই কলেজ পড়ুয়া শৈলেন্দ্র সান্যালের "রায়মঙ্গল" সম্পাদনার কাজ নিজেই একটা ইতিহাস হয়ে রইলো। রায়মঙ্গল এর কবি এবং চিত্রশিল্পী তালিকা কিন্তু চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মত। লীলা মজুমদার, আশাপূর্ণা দেবী, অন্নদাশংকর রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শামসুর রহমান এর মতো ব্যক্তিত্ব রা সত্যজিৎ কে নিবেদিত কবিতা বা ছড়া লিখেছেন। ওপরের লেখাটি স্বয়ং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। অন্যদিকে ছবি এঁকেছেন গণেশ পাইন, অন্নদা মুন্সী, মকবুল ফিদা হুসেন এর মত চিত্রশিল্পীরা। আগেই বলেছিলাম সম্পাদক শৈলেন্দ্র সান্যাল কি চূড়ান্ত স্ট্রাগল করে এই বইটি সম্পাদনা করেছেন। বইয়ের ছড়া, কবিতা এবং ছবিগুলো, আগামীতে এই বইকে সত্যজিৎ প্রেমীদের কাছে এক অমূল্য সম্পদ করে রাখবে। এবার আসি আরেকটা মানুষ প্রসঙ্গে। এই মানুষটি দীর্ঘ তিরিশ বছর পর ঠিক করলেন "রায়মঙ্গল" পুনঃ প্রকাশ করবেন। একটি বই যেটি এমনিতেই এক রত্ন বিশেষ, এই মানুষটির ছোঁয়ায় এক অন্য উচ্চতা লাভ করলো। তিনি সম্পাদক শৈলেন্দ্র সান্যাল কে দিয়ে লেখালেন এক দীর্ঘ মুখবন্ধ, যা পড়ে আমরা জানতে পারি এই বই তৈরির নেপথ্য কাহিনী। এই মানুষটি বইয়ের শেষে সংযোজন করলেন সত্যজিৎ রায়ের লেখা বেশ কিছু চিঠি, রায়মঙ্গল নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর এবং বিভিন্ন বিশিষ্ট জনের রায়মঙ্গল কে পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তা। চিঠি গুলো পড়ে, নিউজ আর্টিকেল গুলো দেখে আজ থেকে তিরিশ বছর আগের জার্নিটা স্পষ্ট দেখতে পারছিলাম। কখনো কখনো সত্যজিৎ রায়ের মতো একটা বিশাল ব্যক্তিত্ব কে নিয়ে লেখা বই নিজেই একটা ইতিহাস হয়ে যায়। সেই বইয়ের নাম "রায়মঙ্গল"