ফ্ল্যাপে লিখা কথা বিবেক ও জ্ঞান দেয়া সত্ত্বেও শয়তানের প্রলোভনে পড়ে মানুষ সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হতে পারে এজন্য বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়ে মানবজাতিকে তাঁর কাঙ্ক্ষিত পথে চলতে সহায়তা করেছেন। পৃথিবী সৃষ্টির পর হতে নবী-রসুলের মাধ্যমে আল্লাহর প্রদত্ত বিধি-বিধানের অনুসরণে মানব প্রজাতির ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক পরিত্রাণ আশা করা যায়। আল্লাহ কর্তৃক নবী-রসুল প্রেরণের ধারাবাহিকতায় হযরত মুহাম্মদ (স.) শেষ ও শ্রেষ্ঠ রসুল। তাঁর নবুয়তের ধারাক্রমে ইসলাম একটি স্বয়ংসম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে আল্লাহর স্বীকৃতির ঘোষনা আসে ওহি প্রেরণের শেষ প্রান্তে। এটি সত্য যে, নবুয়ত ও রিসালতের ধারা বন্ধ হওয়ায় তাঁর পর আর কোনো নবী ও রসুল আসবেন না। কিন্তু মহানবী (স.) সারা বিশ্বের মানবগোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত রসুল হিসেবে তাঁর প্রচারিত ইসলামের কার্যক্রম চলতে থাকবে শেষ প্রলয় দিন পর্যন্ত। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশ মোতাবেক প্রতিটি মুসলমানকে সাধ্যনুযায়ী ইসলামের প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই মহানবীর (স.) অনুসারীগণ ইসলামের অমিয় বাণী নিয়ে ছুটেছেন বিশ্বের চতুর্দিকে। ইসলাম প্রচারের এই ধারাবাহিকতায় বাংলায় এসেছেন উলামা-মাশায়েখ এবং রাজশাহী অঞ্চলও তার বহির্ভূত নয়। ‘রাজশাহীতে ইসলাম’ গ্রন্থে লেখক বস্তুনিষ্ঠভাবে উপাত্ত-উপকরণের যাচাই-বাছাই করে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন থেকে শুরু করে জনজীবনে বহুমাত্রিক প্রচারের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা একই সাথে ইসলামি জীবনের ব্যাপক কার্যক্রম ও আঞ্চলিক ইতিহাস অনুসন্ধানের প্রতি জ্ঞানপিপাসুদেরকে আকৃষ্ট করবে। উপসংহারসহ গ্রন্থটি ছয়টি অধ্যায়ে বিন্যাসিত। এগুলোতে জেলার পরিচিতি প্রাক-মুসলিম যুগ, মুসলিম যুগ, ইসলাম প্রচারের ধারা, মুসলিম স্থাপত্য, লিপি ও শিল্পকলা, শিক্ষাব্যবস্থা, সাহিত্য, সংস্কৃতি অর্থনীতি ও লোকাচারের উপর সংক্ষিপ্ত হলেও তাৎপর্যবাহী আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে।
সূচিপত্র * জেলা পরিচিতি * প্রাক-মুসলিম যুগ * মুসলিম যুগ ও ইসলাম প্রচারের ধারা * স্থাপত্য, লিপি ও শিল্পকলা * রাজশাহী জেলা ও আধুনিক যুগ
অধ্যাপক ড. এ কে এম ইয়াকুব আলী বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় ১৯৩৯ সালের ১ আগষ্ট জন্ম গ্রহণ করে। তার পিতা মরহুম আলহাজ্জ মোহাম্মদ বাসতুল্লাহ শেখ এবং মা মরহুমা ফাতিমা । তিনি ঢাকা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৫২ সালে আলিম পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে নবম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে একই বোর্ড থেকে ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এবার প্রথম বিভাগে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ইংরেজি ও গণিত বিষয় যুক্ত করে কৃতিত্বের সাথে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হাদিস নিয়ে কামিল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি লাভ করেন ১৯৫৬ সালে। মাদ্রাসা শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে অধ্যাপক ইয়াকুব আলী সাধারণ ধারার শিক্ষা কর্যক্রমে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আজিজুল হক কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে প্রথম বিভাগে আই এ পাশ করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৬০ সালে পঞ্চম স্থান অধিকার করে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ শ্রেণিতে ভর্তি হন। প্রথম শ্রেণিত ২য় স্থান লাভ করে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৬২ সালে। অধ্যাপক ইয়াকুব আলী দ্বিতীয়বার এম এ ডিগ্রি লাভের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিষয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৭০ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। এই জ্ঞানতাপস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম ইউজিসি ফেলো হিসেবে পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৮২ সালে। সমান দক্ষতার সাথে তার বিচরণ রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি এবং উর্দু ভাষায়। সংস্কৃত ভাষায়ও তাঁর প্রাথমিক দক্ষতা রয়েছে। এ যাবৎ তাঁর লেখা গবেষণা ও জনপ্রিয়ধারার ১৬ টি প্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের জার্নালে ইংরেজি ভাষায় লেখা তাঁর প্রবন্ধের সংখ্যা ৬৬ টি, বাংলা ভাষায় লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ১৮টি। আরবি ভাষায় অধ্যাপক ইয়াকুব আলীর লেখা ১টি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত ২৫ জন গবেষক পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, এম ফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন ৭ জন। আরো অকে গবেষক তাঁর তত্ত্বাবধানে গবেষণা করছেন। কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে তিনি তাঁর পেশা-জীবনের যাত্রা শুরু করেন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে তাঁর নতুন যাত্রা শুরু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে। তবে মাঝখানে অল্প কিছু সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অধ্যাপক ইয়াকুব আলী ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতার পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেছেন রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সহকারী কিউরেটরের পদে। তিনি বিভাগীয় সভাপতি ও অনুষদের ডিন হিসেবেও দায়িত্বে সফল ছিলেন।