কিছু কিছু কবি রয়েছেন এমন যারা নিজেকে তৈরি করে নেন, ধৈর্য ও স্থৈর্যের পরিক্রমায় নিজেকে স্থিত করেন। নির্মীয়মাণ সৃষ্টিকে আভাসিত করবার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার সংকল্পে দাঢ্য হন। এ কথাটি মনে হলো মাসুম আহমদের কবিতাগুলো পড়ে। তিনি শূন্য দশকের কবি, লিখছেন দীর্ঘদিন থেকে। বই বের করার কোনও রূপ তাড়াহুড়া করেননি। নিজেকে প্রস্তুত করেছেন অসীম পরিমিতিবোধে। তাঁর প্রথম বইটি বেরোতে যাচ্ছে, যার অধিকাংশ কবিতা শিল্পময়তায় ঋদ্ধ। কবিতার যে শিল্পীনিপুণ ছদ্মভাষণ তা তাঁর প্রায় প্রতিটি কবিতায় লক্ষণীয়। ‘একটা শহর জেগে ওঠে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে বলেছিল, বিপ্লব চাই অথবা মৃত্যু’— এই বাক্যবন্ধ দিয়ে যাঁর কবিতা বইয়ের শুরু তাতে তাঁর কবিতা নির্মাণের অভীপ্সা অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি তাঁর একটি কাব্যভাষা তৈরিতে সচেষ্ট থেকেছেন। যখন তিনি লেখেন ‘আমাদের সোনালি ইলিশ উৎসব জমে ওঠার পিছনে তোমার সাদা হাত থাকার প্রতিশ্রুতি যে বয়ামে রাখা ছিল, সেটা লাল পিঁপড়েরা টেনে নিয়ে গেছে গভীর জঙ্গলে’— একথারই প্রতিধ্বনি তোলে। শিল্পের বোধকে সুন্দরভাবে সংহরণ করে নিয়ে কবি লিখেন¬— ‘ঈশ্বর আগামীর খবর সম্পাদনা নিয়ে যখন খুব ব্যস্ত / আমি তখন বাজার থেকে ডায়েরি কিনে নিয়ে এসে / সেখানে স্পষ্ট অক্ষরে লেখার চেষ্টা করি / মানুষ তার দুই হাত কেমন করে ইগল পাখির মতো প্রশস্ত করবে’। তার কবিতায় শিল্প—জিজ্ঞাসার সাথে জৈবনিক ও যাপনের নানা অসংগতির কথাও ওঠে আসে। কখনও শ্লেষ, শ্লেষের আড়ালে বিপ্লবের প্রতিধ্বনি তোলে। কোনও কোনও কবিতায় আভাসিত হয় প্রেম, প্রেমের আর্তি। এক ধরনের রোমাণ্টিকতায় যা স্ফুটতর হয়ে ওঠে। একান্ত স্বাতন্ত্রে্য তার কবিতা আপন অবিমিশ্র বিশুদ্ধতা তৈরি করার পথে পা বাড়িয়েছে এ কথা এখনি বলা যায়। তার বইয়ের নামটিও অভিনব ও বিনয়নম্রতার পরিচয় বহন করে। আমি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একজন সার্টিফাইড কবি হওয়ার প্রস্তুতির—পাঠক আদৃত ও বহুল প্রচার কামনা করি। --তমিজ উদ্দীন লোদী