১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশী বিপর্যয়ের মাধ্যমে বাংলার মুসলমানরা রাজনৈতিক ক্ষমতা হারান। ইংরেজ কোম্পানি ক্ষমতা গ্রহণ করে পরাজিত শাসক শ্রেণিকে ধ্বংস করার নীতি গ্রহণ করেন। মুসলমানরাও শক্র জাতির বয়ে আনা ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতির প্রতি কঠোরভাবে অবজ্ঞা প্রদর্শন করতে থাকে। এভাবে পরবর্তী একশত বছরের মধ্যে মুসলমানগণ চাকরি, ভাষা, অর্থ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি-জমা, জমিদারি প্রভৃতি হারিয়ে এক পশ্চাৎপদ শ্রেণিতে পরিণত হয়। ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের অবসান হলে ব্রিটিশ সরকার এককভাবে এ বিদ্রোহের জন্য মুসলমানদের দায়ী করে। এতে মুসলমান সমাজ অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন। সিপাহী বিদ্রোহের অবসানের পর মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণা অনুযায়ী ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর ভারতের শাসনভার ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত হতে প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলে যায়। মহারানি ভারতের সকল প্রজাদের প্রতি সমান ব্যবহার এবং চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সকল সম্প্রদায়ের সকল সদস্যকেই সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ফলে বাংলার মুসলিম সমাজ নতুন করে চিন্তা করার সুযোগ পান। মুসলমানদের যখন ইংরেজি ভাষা শিক্ষার হাতেখড়ি হয়নি, প্রতিবেশী হিন্দুরা তখন ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ও অধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথে অনেকটা এগিয়ে যান। ফলে তাঁদের মধ্যে একটি শক্তিশালী শ্রেণির উদ্ভব হয়। এই শ্রেণি থেকে আগত নব্যশিক্ষিত তরুণেরা ব্রিটিশ প্রশাসনে চাকরি লাভে সমর্থ হলেও ১৮৭০-এর দশকে তাদের মধ্যে ব্যাপকহারে বেকারত্ব দেখা দেয়। এর অন্যতম কারণ ছিল চাকরি ক্ষেত্রে সীমিত সুযোগ। হিন্দুদের মধ্যে এই বেকারত্ব সামাজিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দেয়। এ সময় নীলচাষ বিরোধী আন্দোলন এবং ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘ভার্ণাকুলার প্রেস এ্যাকট’ বিরোধী আন্দোলন সরকারকে নাড়া দেয়। এই সকল জাতীয়তাবাদ এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিপরীতে একটি শক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য ব্রিটিশ প্রশাসন মুসলমান সমাজকে নির্দিষ্ট করে। এই সমাজের অগ্রগতির জন্য ব্রিটিশ প্রশাসন তাদের সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করে। এ সুযোগের পূর্ণমাত্রার সদ্ব্যবহার করেন বাংলার সমকালীন মুসলিম নেতৃবৃন্দ। তাঁরাও সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসেন .....