প্রথম সংস্করণ প্রসঙ্গে লেখকের কথা আমার প্রথম বই “ব্যাংক গ্যারান্টি” প্রকাশিত হবার পর বহু শুভানুধ্যায়ী বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে সহজ ভাষায় সকলের বোধগম্য একটি বই লেখার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যের কঠিন বিষয়গুলোকে সহজবোধ্য ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা যে সহজ নয়- তা বইটি লিখতে গিয়ে আমি বেশ বুঝতে পেরেছি। শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশ্যে তাই আমার প্রথমেই কবি গুরুর ভাষায় কৈফিয়ৎ থাকলো- “সহজ কথা বলতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায় না বলা সহজে”। বর্তমানে প্রতিটি পেশাতেই প্রতিযোগিতা যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি এর সহজাত অনুষংগ হিসেবে কিছু পেশাগত সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে, আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নবীন ব্যাংকার এখন পর্যন্ত ঋড়ৎবী ড়ঢ়বৎধঃরড়হ-এর সাথে অনেকাংশেই অপরিচিত বিধায় এ ক্ষেত্রে প্রায়ই বড় ধরনের জটিলতা,এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বিপর্যয় ঘটতে দেখা গেছে। ঋড়ৎবী ড়ঢ়বৎধঃরড়হ-এর সাথে বর্হিবিশ্ব এবং বৈদেশিক মুদ্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিধায় বিষয়টি একাধারে যেমন ঐরমযষু ফুহধসরপ তেমনই ঝবহংরঃরাব-ও বটে। সে জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ের রীতি-নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জনের কোন বিকল্প নেই। দেশের অগ্রসরমান ব্যাংকিং পেশায় অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে উচ্চ শিক্ষিত, মেধাবী ও প্রতিশ্রæতিশীল তরুণদের বেশী বেশী প্রবেশ ঘটছে। তাদেরকে সঠিকভাবে দিক নির্দেশনা প্রদান করা সম্ভব হলে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর একদিন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে- একথা নির্র্দ্বিধায় বলা যায়। সেজন্য এসব তরুণদের হাতে মাতৃভাষায় লিখিত সহজবোধ্য বই তুলে দেয়া একান্ত জরুরি। এটি সিনিয়র ব্যাংকারদের একটি সামাজিক দায়িত্ব ও বটে। সে দায়িত্ববোধ থেকেই প্রধানত বিদেশী ভাষায় রচিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কঠিন বিষয়সমূহকে মাতৃভাষায় বোধগম্য করে উপস্থাপনার তাগিদ অনুভব করে আসছিলাম। বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী ছাড়াও কিছু শীর্ষস্থানীয় শ্রদ্ধাভাজন ব্যাংকারের অনুপ্রেরণা আমার ভেতরকার সে আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়িত হতে সহায়তা করে। বইটিতে ঞযবড়ৎু ্ ঢ়ৎধপঃরপব –এর সহজ সমন্বয় করার চেষ্টা করেছি। পেশাগত জীবনে ডকুমেন্টারী ক্রেডিটের ডেস্ক অফিসার হিসেবে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে এবং একজন ব্যাংকিং প্রশিক্ষক হিসেবে টঈচউঈ, ওঝইচ,টজঈ,টজজ,ঊীপযধহমব ৎধঃব, ঊীপযধহমব পড়হঃৎড়ষ, ওসঢ়ড়ৎঃ, ঊীঢ়ড়ৎঃ প্রভৃতি বিষয়গুলোর তাত্তি¡ক ও প্রায়োগিক দিকসমূহকে পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করত বাস্তবানুগ করে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। আমাদের দেশে এর আগে বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিময়ের উপর একাধিক বই প্রণীত হয়েছে। কিন্তু যতদূর মনে পড়ে ডকুমেন্টারী ক্রেডিটের খুঁটিনাটি বিষয়কে বাস্তবসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করে খুব বেশী বই রচিত হয়নি। ডেস্কে দীর্ঘকাল কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং দেশে বিদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ, আরবিট্রেশন, মামলা প্রভৃতি মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতার আলোকে ডকুমেন্টারী ক্রেডিটের প্রায় সমস্ত বিষয়কে ব্যবহারিক উপযোগী করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি বইটি ডেস্ক পর্যায়ে কর্মকর্তাদের দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা প্রদানে এবং ডিপ্লোমা পরীক্ষার্থী ও ব্যাংকিং বিষয়ে পাঠরত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সার্থক গাইডবুক হিসাবে কাজ করবে। বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন বইয়ে অনেক ইংরেজি শব্দের বাংলা অনুবাদ বিভিন্নভাবে করেছেন। কিন্তু আমার নিকট কিছু কিছু শব্দের অনুবাদ খুব বেশী অপরিচিত লাগে। যেমন- খবঃঃবৎ ড়ভ ঈৎবফরঃ এর বাংলা ‘প্রত্যয়পত্রের ” চেয়ে “ঋণপত্র”কেই বেশী পরিচিত মনে হয়েছে। ওহাড়রপব এর বাংলা “চালানপত্র“ না বলে “ইনভয়েস”, ঈবৎঃরভরপধঃব ড়ভ ঙৎরমরহ এর বাংলা “প্রভবলেখ“ না বলে “সার্টিফিকেট অব অরিজিন” বলাই আমার নিকট সহজ মনে হয়েছে। সে জন্য আমি এসব শব্দকে বাস্তবে যে ভাবে শুনে অভ্যস্ত- সে ভাবেই লেখার চেষ্টা করেছি, যেন নবীন পাঠকগণ তা সহজেই বুঝতে পারেন। বইটিতে বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিময়ের সকল দিক ছাড়াও কয়েকটি কেইস স্টাডি, ২৫ টি গঈছ, ১৮০টি টীকা, ৯৫টি ঋঅছ বা ঋৎবয়ঁবহঃষু অংশবফ ছঁবংঃরড়হং (প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন), বৈদেশিক লেনদেন চেকলিস্ট প্রভৃতি সংযোজন করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এতে পাঠকগণ জ্ঞানের বৈচিত্র্য অম্বেষণে এবং সম্পূর্ণ এক নতুন স্বাদ আস্বাদনে সক্ষম হবেন। বইটি রচনায় ব্যাংকিং জগতের অনেক শীর্ষ নির্বাহী আমাকে অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছেন। তাঁদের কয়েকজনের নাম আলাদা পৃষ্ঠায় উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। এছাড়া, যাদের নাম উল্লেখ করা হয় নি, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জনাব পীযুষ কান্তি সাহা (হেড অব আইডি,এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড) ও জনাব মোঃ আবদুল মান্নান (প্রিমিয়ার ব্যাংক, বনানী শাখা, ঢাকা) বইটির পান্ডুলিপি আদ্যান্ত দেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। পান্ডুলিপি সমৃদ্ধকরণে আমার সহকর্মী স্বপন কুমার ধরের অবদান কখনো ভুলার নয়। আরো অসংখ্য বন্ধু ও সহকর্মী দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্নভাবে বই লেখার বিষয়ে উৎসাহ, পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। তাদের নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন থাকলেও পরিসর স্বল্পতার কারণে শুধুই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কম্পিউটার কম্পোজের মত শ্রম সাধ্য কাজে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনেক সহকর্মীই দীর্ঘদিন যাবৎ পরিশ্রম করেছেন। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বইটিকে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনে দেশী-বিদেশী অনেক লেখকের বই, ম্যানুয়াল ও লেখনী পর্যালোচনা করেছি এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেছি। তাঁদের কাছে ঋণ স্বীকার করছি। অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা সত্তে¡ও বইটির কিছু মুদ্রণ প্রমাদ রয়ে গেছে। সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বইটির গুণগত উৎকর্ষ ও মানোন্নয়নে বিজ্ঞজনের মতামত সাদরে গৃহীত হবে এবং ভবিষ্যৎ সংকলনে সেটি সংযোজন করা হবে। মুহাম্মদ উল্লাহ