অক্ষয়কুমার জমিদারের প্রজাদের ওপর কী কী ধরনের অত্যাচার করে তার কিছু নিদর্শন তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন-- ভূম্যধিকারির লোকে বল দ্বারা তাহারদের ধান্যগ্রহণ করে, গো সকল হরণ করে, এবং তাহারদিগকে গোনী-বন্ধ করিয়া জল-মগ্ন করে ও প্রহার করে। ভূস্বামী ও দারোগা এবং তাহারদিগের কর্ম্মচারিরা প্রজাদিগের যে প্রকার শারীরিক দণ্ড করে, তাহা কলিকাতাবাসি অনেক লোক সবিশেষ অবগত নহেন অতএব পশ্চাৎ কয়েক প্রকার কায়দণ্ডের বিবরণ করা যাইতেছে… এরপর তিনি আঠারো (১৮) রকমের শাস্তিদানের কথা উল্লেখ করেছেন। এই নিপীড়নমূলক শাস্তিগুল ছিল এইরকম—১) দণ্ডাঘাত এবং বেত্রাঘাত করা ২) চামড়ার জুতো দিয়ে প্রহার করা ৩) বুকে বাঁশ দিয়ে দলন ৪) ‘খাপরা’ দিয়ে নাক ও কান ‘মর্দন’ করা ৫) মাটিতে নাকে খত দেওয়ানো ৬) দুইহাত পেছনে বেঁধে দিয়ে তার সঙ্গে বাঁশ বেঁধে ‘মোড়া’ দেওয়া ৭) সারাগায়ে বিছুটি দেওয়া ৮) দুই হাত এবং দুই পা শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা ৯) কান ধরে দৌড় করানো ১০) দুটো কঠিন ‘বাখারি’র একদিকে বেঁধে তার মধ্যে হাত রেখে ‘মর্দন’ করা ১১) গরমকালে প্রচণ্ড রোদে ইটের ওপরে দুই পা ‘অতি বিযুক্ত’ করে হাতে ভারী ইট নিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা ১২) দারুণ শীতের সময় ঠাণ্ডা জলের মধ্যে নামতে বাধ্য করে গায়ে ঠাণ্ডা জল ঢালা ১৩) ‘গোণীবদ্ধ’ করে জলমগ্ন করে রাখা ১৪) গাছে বা অন্য কোনও উঁচু জায়গায় বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা ১৫) ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ধানের গোলায় পুরে রাখা (এই গোলার ভেতর ভীষণ গরম) ১৬) চূণের ঘরের মধ্যে রুদ্ধ করে রাখা ১৭) কারারুদ্ধ করে উপবাসী রাখা অথবা ধানের সঙ্গে ভাত মিশিয়ে সন্ধ্যায় একবারই খেতে দেওয়া এবং ১৮) ঘরের মধ্যে আটকে রেখে লঙ্কা-মরিচের ধোঁয়া দেওয়া।—আর এই ধরনের নির্মম ও অমানবিক অত্যাচার করে ভূস্বামী অর্থাৎ জমিদারদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল বলে অক্ষয়কুমার জানিয়েছেন।