‘কাঁটাযুক্ত গলিপথ পেরিয়ে’ প্রবন্ধ গ্রন্থ পড়ে তাঁর ভাষার নিপুন কারুকাজ ও বিষয়বস্তু উপস্থাপনার যে চমৎকারিত্ব উপলব্ধি করলাম তা সত্যি উল্লেখ করার মতো। পাঠ করার সাথে সাথে পাঠক হৃদয়ে রেখাপাত করবে। প্রবন্ধে সাধারণত: যে কাঠিন্য থাকে এতে তা নেই। প্রত্যেকটি প্রবন্ধের মধ্যে নম্বর দিয়ে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে ক্রমশ: আলোচনা করা হয়েছে। এ জন্য পড়তে পাঠকদের মনে ক্লান্তি লাগবে না। বরং মজার গল্পÑউপন্যাস পাঠের মতো আনন্দ পাবে। প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় একান্তই আমাদের কর্মজীবনের বিভিন্ন সময় পরিবেশ ও পরিস্থিতির চিন্তাভাবনা দ্বিধাÑদ্ব›দ্ব, আলোÑছায়ার মতো অনুভব গুলো। ইয়াসিন মাহমুদ একজন প্রবীণ চিন্তাবিদের মতো নানা পরিস্থিতিতে মানব মনের নানা চিন্তাভাবনা ও আশাÑনিরাশার সকল অবস্থা বিশ্লেষণ করে অবশ্য করণীয় দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে চেয়েছেন। গ্রন্থে মোট বারোটি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রতিটি প্রবন্ধে পৃথক পৃথক স্বাদ ও সৌরভ রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে মানব মনের আলো আঁধারের দিগন্ত উন্মোচন, যেখানে পাঠক খুঁজে পাবেন নিজেদের ভেতরের লালিত স্বপ্ন ও ভাবনাগুলো। প্রবন্ধ কয়টি হচ্ছেÑ মনের মিনারে জীবনের সান্নিধ্য, এক জীবনের ইশতেহার, অনন্ত পথের যাত্রায় প্রথম প্লাটফর্ম বিরতি, সৌরভ ছড়ানো হৃদয়ের কথা, যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয়, আমাদের যাত্রা অনন্তকালের, কাঁটাযুক্ত গলিপথ পেরিয়ে, শাহাদাতে উদ্দীপ্ত জীবন খোঁজে প্রভুর সান্নিধ্য, সকালের সূর্যোদয় অনিবার্য, জীবন প্রভাতের শপথ: একান্ত অনুভবের আয়না, বুকের ভেতর মরু সাইমুম, জীবনের এই সময়ে দাঁড়িয়ে। লেখক তাঁর প্রবন্ধগুলো এমনভাবে স্তরে স্তরে সাজিয়েছেন, যেনো প্রাসাদের উপরে ওঠার সিঁড়ির একেকটি স্টেপ বা ধাপ। পাঠক প্রথম স্টেপে পা রাখলেই লিপ্টের মতো ক্রমশ: উপরের দিকে কাক্সিক্ষত স্থান পর্যন্ত নিয়ে যায়। সিঁড়ির স্টেপে স্টেপে রয়েছে কণা কণা আলো। বলতে কি পড়া শুরু করলেই পাঠকে টেনে নিতে থাকে সামনের দিকে। এমনি এক অনিবার্য আকর্ষণ রয়েছে বিষয় ও ভাষায়, যা সাধারণ প্রবন্ধে পাওয়া যায় না। জীবন চলার পথ বড়ই কঠিন, যেনো কাঁটাযুক্ত গলিপথ। তবু কাক্সিক্ষত সফলতার জন্য সকল বাঁধা অতিক্রম করে এই কাঁটাযুক্ত চাপা গলিপথে হাঁটতে হয় সবারই। তবেই সফলতা। জীবন মানেই তো সংগ্রামময় জাগ্রত প্রহর। লেখক জীবনের সকল অবস্থায়, তা দুঃখÑকষ্ট, বাঁধা যাই আসুক না কেনো, একটি মহত উদ্দেশ্যের দিকে আহŸান জানিয়েছেন। তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তব্যের পক্ষে পবিত্র কুরআনের প্রচুর আয়াত ও হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, অনেক গুণীজনের বাণীও তুলে ধরেছেন। এর ফলে প্রবন্ধগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে এবং সরস হয়ে ওঠেছে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মানবাধিকারকর্মী ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা শহীদ ম্যালকম এক্স এর বাণী উল্লেখ করেছেন: ‘‘নীরবে জালেমের জুলুম সয়ে যাওয়ার কথা কোরানের কোথাও নেই। আমাদের দ্বীন আমাদের বুদ্ধিমান হতে শেখায়, শান্তিকামী সাহসী হতে শেখায়। আইন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু সাথে এটাও বলে যদি তোমাদের উপর জুলুম করা হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করো।’’ (পৃ. ৬৫) গ্রন্থটির পাতায় পাতায় জীবনকে অর্থপূর্ণ, সফল ও সুন্দর করার জন্য এবং সামনের দিকে এগিয়ে নেবার জন্য মানবকল্যাণকামী লেখক এর উল্লেখিত হাদীস: ‘যার আজকের দিন গতকালের চেয়ে ভালো হলো না, সে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (পৃ. ৭১) এই হাদীস পাঠকদের অনুপ্রাণিত করবে। যারা মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্য ও সফলতা সম্পর্কে সচেতন নন বা সচেতন থেকেও নানা ছুঁতা দেখিয়ে পাশ কেটে যেতে চান, দায়িত্ব অবহেলা করে যেতে চান, তাদের চিন্তাভাবনা পরিশুদ্ধ ও শাণিত করবে এ গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে। এমন একটা উন্নতমানের গ্রন্থ পাঠকদের উপহার দেয়ার জন্য ইয়াসিন মাহমুদকে অনেক অনেক মুবারকবাদ জানাচ্ছি। আর যে গ্রন্থ যত বেশি মানবকল্যাণকর সে গ্রন্থ তত বেশি প্রচার প্রসার লাভ করলে সমাজ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হয়। এদিক থেকে ‘কাঁটাযুক্ত গলিপথ পেরিয়ে’ গ্রন্থটির বহুল প্রচার প্রসার কামনা করছি। আবদুল হালীম খাঁ কবি ও কথাসাহিত্যিক