"কোরান দর্শন-১" বইয়ের ভূমিকাঃ কোরানের বাচনভঙ্গির কাব্যিক যে ধারা, তাহা অনুবাদে যথাসম্ভব রক্ষা করিতে চেষ্টা করা হইয়াছে। ইহার ফলে অনুবাদ সুখপাঠ্য হয় নাই। কথার যথার্থতা রক্ষা করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে। কোরানুল হাকীমের অনেক কথাই মূলত রূপক করিয়া ব্যবহার করা হইয়াছে। রূপক অর্থ বুঝিয়া পাঠ করিবার চেষ্টা করিলে ইহার গভীর জীবনদর্শন উপলব্ধি করা যাইবে এবং মনের সৌন্দৰ্যবােধের উৎকর্ষ লাভ হইবে। কোরান কেবলই জীবন বিধান নহে। ইহা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দান। সালাত এই দর্শন-জ্ঞানের মূল উৎস। ইহার দর্শনে যিনি পরিপক্ক তিনি যখন যে বিধান যাহাকে দান করিবেন তাহাই তখন তাহার জন্য কোরানের বিধান। বিধান পরিবর্তনশীল কিন্তু দর্শন অপরিবর্তনীয়। গুরুকেন্দ্রিক সালাতের আত্মিক অনুশীলনের কথা কোরানে সর্বত্র পরিব্যক্ত আছে। সালাত প্রক্রিয়ার সাহায্যে জন্মান্তরবাদের পরিচয়-জ্ঞান পরিস্ফুট হইয়া উঠে এবং বিষয়-দর্শনের উপর জ্ঞানচক্ষু উদিত বা উন্মীলিত হয়। এই সকল কথা কোরানে সর্বত্র থাকা সত্ত্বেও বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করিলে কোরানের কোনও দর্শনই উপলব্ধি করা সম্ভব নহে। বস্তুবাদী অর্থের মধ্যে অসংখ্য আত্মবিরােধী ভাব এবং গরমিল বিদ্যমান। আল কোরানের শতাধিক বিশিষ্ট শব্দের সংজ্ঞা না জানিলে কোরানের দর্শন অনুধাবন করা সম্ভব নহে। বাংলা ভাষা আরবী ‘আল’ শব্দের কোনও একটি নির্দিষ্ট প্রতিশব্দ নাই। তাই আমরা কোরানের বঙ্গানুবাদে আল (The) শব্দটিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ, বিশিষ্ট, প্রতিষ্ঠিত এই কয়টি শব্দ দ্বারা প্রকাশ করিয়াছি। ‘মদ’ এর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনুবাদের জটিলতা এড়াইবার জন্য মদের অর্থ কদাচিৎ ভাষায় বর্ণনা করা হইয়াছে। বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দকে অনুরােধ করা যাইতেছে, তারা যেন মদসমূহের অর্থের সঙ্গে যােগ রাখিয়া মদের অপ্রকাশিত অংশের ভাবগাম্ভীর্য অনুধাবন করিতে প্রয়াস পান। কোরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার যে অভিযোগে রহিয়াছে তাহা নিতান্ত অমূলক। এই পুস্তকে তাহার উত্তর সন্ধান করা যাইতে পারে । সকল পাঠকের প্রতি শুভেচ্ছা রহিল।