"জাতির জনক বঙ্গবন্ধূ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুজিবুর রহমান-ওই নাম যেনাে ভিসুভিয়াসের অগ্নিউগারী বাণ। বঙ্গদেশের এ প্রান্ত থেকে সকল প্রান্ত ছেয়ে...। জ্বালায়ে-জ্বালিছে মহা দাবানল,ঝঞা অশনী বেয়ে। বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শৃঙ্খল ভেঙ্গে জাতিকে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাঙালির মনে হাজার বছরে ধরে প্রবাহিত হয়ে আসছিলাে এবং বার বার যে স্বাধীনতার পায়ে শৃঙ্খল পরিয়ে দিয়েছিলাে বিভিন্ন যুগের মীর জাফররা- বাঙালির সেই স্বাধীনতার স্বপ্নই বাস্তবে রূপ দিয়ে গেছেন গােপালগঞ্জের নিভৃত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ, স্বাধীনতার ঘােষক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ‘মুজিব একটি নাম- মুজিব একটি ইতিহাস।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাঙালি, বাংলাদেশ-এ শব্দগুলােকে একটিকে অপরের কাছ থেকে আলাদা করা যায় না, বিচ্ছিন্ন করা যায় না, পৃথক করা যায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে হয়তাে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মই হতাে না। এ রকম একজন কালজয়ী মানুষ হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট তথাকথিত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তানের জন্মের প্রথম রাতেই কলকাতার বেকার হােস্টেলের একটি কক্ষে কয়েক জন বাঙালি তরুণ নেতা এক গােপন ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। যে বৈঠকের উদ্যোক্তা ছিলেন সে সময়ের তরুণ প্রতিভাবান রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সে বৈঠকে পাকিস্তানে বাঙালির রাজনৈতিক ভবিষ্যত ও করণীয় এবং বাঙালিদের অধিকার সমুন্নত করার লক্ষ্যে পাকিস্তানে একটি বিরােধী রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নিয়ে আলােচনা হয়। এরপরও কিছু দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতায় ছিলেন তাঁর বি.এ. পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। বাঙালির তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় এসে ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র হিসেবে তাঁর কর্মতৎপরতা শুরু করেন। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা এ দেশের গরিব-দুঃখি মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক জীবনের সূচনা থেকেই নিবেদিত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তৎকালীন পাকিস্তানের রাজপথে নামেন বাঙালির অগ্নিপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ ঢাকার রাজপথে প্রথম মিছিলেও নেতৃত্ব দেন। তিনি। এ জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ‘শেখ মুজিব’ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতার ঘােষণা না দেওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামের প্রবাদ পুরুষই ছিলেন। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ জীবনের প্রথমবার এবং সেটাই ছিলাে তার শেষবার- এ দেশে আসেন ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ। '৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে এক জনসমাবেশে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন উচ্চারণ করেন- উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা'- তখন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহর একতরফা ঘােষণার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রেসকোর্স ময়দানে যে বাঙালি বীর না’-‘না’-‘না’ ধ্বনি দিয়ে প্রতিবাদ জানান তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। এই রেসকোর্স ময়দানেই ২৩ বছর পর ১৯৭১-এর সেই মার্চ মাসের ৭ তারিখ বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাঠ করেন বাঙালির হাজার বছরের সেই শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' স্বাধীনতার লক্ষ্যে বাঙালিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই অমর কবিতা বাংলার আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে যায় '৭১-এর সেই উত্তাল ৭ মার্চেই। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। তার স্বাধীনতার ঘােষণার মধ্য দিয়েই শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘােষণার সফল বাস্তবায়ন ঘটে। ইতিহাসের সেই মহানায়ক, সর্বকালের সেই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সগ্রামী জীবনের সেই অবিস্মরণীয় দিনগুলাের কথা নিয়েই রচিত হলাে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মােস্তাক হােসেন
‘আজকের কাগজ’-এর মােস্তাক হােসেন '৮৫ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সাড়া জাগানাে প্রচ্ছদ কাহিনী ‘বঙ্গোপসাগরের জেলে লিখে তার সাংবাদিকতার সূচনা– এরপর বিচিত্রায় ‘একাত্তরে পাক বাহিনীর বন্দি শিবিরে’ ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের বিচার’ ২৫ মার্চের ঢাকা-গণহত্যার সূচনা পর্ব ইত্যাদি। ৯২ সালে ‘আজকের কাগজ’-এর সিনিয়র রিপাের্টার পদে যােগদান। এ সময় একের পর এক শীর্ষ কলাম লিখে সাড়া তােলেন মােস্তাক হােসেন। '৯২ সাল থেকে ২০০৭ আজকের কাগজ’-এ আওয়ামী লীগ বিট কভার করতে গিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাংবাদিক টিমের সদস্য হিসেবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান। কভার করেন তার বিশাল জনসভা, সংবাদ সম্মেলন ও গুরুত্বপূর্ণ সব বৈঠক। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি এবং ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মােহাম্মদ হানিফের অনেক জনসভা, সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান কভার করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মােহাম্মদ হানিফের একাধিকবার । আজকের কাগজ’-এর শেষ দিনটি পর্যন্ত অগ্রসর পাঠকের এই দৈনিকটির বিশেষ প্রতিনিধি পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক স্বাধীন দেশ’ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে মােস্তাক হােসেন ঢাকার রিপােটার্স ইউনিটির সভাপতি এবং দৈনিক ডাকের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে নিয়ােজিত আছেন। মােস্তাক হােসেনের জন্ম ১৯৬০ সালের ২ ডিসেম্বর বরিশালে । বাবা প্রয়াত প্রফেসর মীর মােয়াজ্জম হােসেন ছিলেন। একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান এবং বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর মােয়াজ্জম হােসেনের প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশের রাজনীতির বিখ্যাত একটি নাম আমির হােসেন আমু। প্রফেসর মীর মােয়াজ্জম হােসেনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন বর্তমানে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিলুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সরকারের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতও ছিলেন প্রফেসর মীর মােয়াজ্জম হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন । মােস্তাক হােসেনের মা বেগম নর-ই-জান্নাত বরিশালের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের মেয়ে ছিলেন। তার বড় খালু শাজাহান সিদ্দিক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সরকারের রেলওয়ে সচিব। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী খুনী মােশতাক ক্ষমতায় এসে প্রথমেই শাজাহান সিদ্দিককে ওএসডি করেন। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা মােস্তাক হােসেনের সাম্প্রতিক বই ‘ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মােহাম্মদ হানিফ: সংগ্রামী এক জীবনের কথা প্রকাশ করেছে ঝিনুক প্রকাশনী। মােস্তাক হােসেনের আরও দুটি আলােচিত বই হচ্ছে ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালদের বিচার, ‘একাত্তরে পাক বাহিনীর বন্দি শিবিরে’ ।।