জাদুকরের জাদুর অবলম্বন ইতিহাস নয় কিন্তু জাদুঘরের জাদুর আসল অবলম্বনই হলো ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সমকাল যেখানে এসে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারি হ্যাঁ, এইসব হলো আমাদের থাকার, আমাদের হয়ে ওঠার, আমাদের সার্থকতার এবং আমাদের গৌরবের স্মারক। ষোড়শ শতাব্দিতে ফ্লোরেন্সের টসকানিতে কোসিমো দ্য মেদিচি যে-ব্যক্তিগত জাদুঘরটি গড়ে তুলেছিলেন একদিন সেটিকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল সমগ্র টসকানির জন্যে, পরে সমগ্র দেশের জন্যে এবং শেষে সারা বিশ্বের জন্যে। হাঙ্গেরিতে রাজা ম্যাথিয়াস, অস্ট্রিয়ায় ম্যাক্সিমিলিয়ান, চেকোস্লোভাকিয়ায় রাজা রুডলফ, জার্মানিতে এ্যালবার্ট যেখানে যে- রাজাই জাদুঘর গড়ে তুলুন না কেন একসময়ে সেগুলো হয়ে গেছে জনগণের সম্পত্তি। আমরা বিশ্বের সেসব দুর্লভ জাতির মধ্যে অন্যতম যে-জাতি নিজের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে শত্রুর কবল থেকে। কেবল তাই নয় আমাদের জাতিগত পরিপূর্ণতা অর্জনের পথে যেসব ফলক আমরা পেরিয়ে এসেছি বিশ্বের খুব অল্প জাতিরই রয়েছে এমন গৌরবের স্মারক। কিন্তু এখনও আমরা অপেক্ষা করছি তেমন একটি জাদুঘরের জন্যে যেখানে এসে আমাদের তরুণ প্রজন্ম গর্বভরে দাঁড়িয়ে বলতে পারবে, হ্যাঁ, জাদুঘর সেই জাদুই দেখাতে পারে যে-জাদুতে সমস্ত অতীত বর্তমানের আয়নায় আলোকোদ্ভাসিত।
মহীবুল আজিজ জন্ম ১৯ এপ্রিল ১৯৬২, নড়াইল, যশাের। ' পিতা : মােহাম্মদ আজিজউল্লাহ, মাতা : জোহরা কোহিনূর। পিতার আদিনিবাস লক্ষ্মীপুর। বর্তমানে চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।। গল্প-উপন্যাস-কাব্য-প্রবন্ধ-গবেষণা-অনুবাদ ইত্যাদি মিলিয়ে তার চল্লিশের অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাড়ব এবং যােদ্ধাজোড় তার দুটি উপন্যাস। উল্লেখযােগ্য গল্পগ্রন্থ গ্রাম উন্নয়ন কমপ্লেক্স ও নবিতুনের ভাগ্যচাদ, দুগ্ধগঞ্জ, মুক্তিযুদ্ধের গল্প এবং তপন শীল ও। তার বিবাহ প্রকল্প; কাব্যগ্রন্থ সান্তিয়াগাে’র মাছ, পৃথিবীর সমস্ত সকাল, ট্যারানটেলা এবং 'হৃদয় বর্ণের কবিতাগুচ্ছ; প্রবন্ধ-গ্রন্থ। সৃজনশীলতার সংকট ও অন্যান্য বিবেচনা, ' অস্তিত্বের সমস্যা এবং লেখালেখি এবং উপনিবেশ-বিরােধিতার সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। হাসান আজিজুল হককে নিয়ে লেখা | তার গবেষণা-অভিসন্দর্ভ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় হাসান আজিজুল হক : রাঢ়বঙ্গের উত্তরাধিকার শিরােনামে। বাংলাদেশের খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেনের তত্ত্বাবধানে রচিত তাঁর পিএইচ-ডি গবেষণার গ্রন্থবদ্ধ শিরােনাম বাংলাদেশের উপন্যাসে। গ্রামীণ নিমবর্গ নােবেল বিজয়ী পােলিশ-মার্কিন ঔপন্যাসিক আইজাক বাশেভিস সিঙ্গারের শােশা উপন্যাসটি তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন। বর্তমানে তিনি ' চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং সভাপতি হিসেবে কর্মরত।