ফ্ল্যাপে লিখা কথা কোনোদিন কি আপনি ভেবেছেনে যে ফুটবল খেলা বা পিয়ানো বাজানোতে যে ক্রিয়ার দরকার তেমনি অন্যের সঙ্গে চালাতেও একটি সুচারু কর্মের দরকার? আপনি জানেন অবশ্য খেলাধুলায় বা অন্যান্য নৈপুণ্যে আমাদের কতগুলো জ্ঞানের দরকার এবং তা সত্বেও আমাদের অভ্যাসের দরকার। সাধারণত যতেই অধিকা জ্ঞান আমরা ভাল করি, ততই অধিক আমরা অভ্যাস করি, ততই অধিক কৃতকার্য আমরা হই। তবুও অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার মতো প্রধান ও চাঞ্চল্যপূর্ণ ক্যিয়াকলাপে আমরা কোনোদিনই কোনো জ্ঞান লাভ করি না বা কোনো শিক্ষা লাভ করি না। আমরা মাত্র এমনিভাবে অভ্যাসে করে যাই যাতে হয়তো আমাদের উদ্দেশ্যে সফল হয় অথবা হয় না, কিন্তু কোনো অবস্থাই আমাদের কাজকর্মে কোনো সুষ্ঠু পদ্ধতি থাকে না বা তা চিন্তাপ্রসূত থাকে না। নৈপুন্যের বিকাশের জন্য যে জ্ঞান ও অভ্যাসের প্রয়োজন এটি অবশ্য নতুন ধরণ নয়। আপনি পেরেছেন প্রথমে যে দিন আপনি টেনিস প্রতিযোগিতা দেখেছেন, তখন থেকেই এ খেলার আইন-কানুন শিক্ষা করার জন্য আপনার আগ্রহ দেখা দিয়েছে এবং তারপর থেকেই আপনার রকেট ‘সার্ভ’- এর সবল রিচার্নের বল ঠিকমত পরিচালনা করার জন্য আপনাকে খুব কষ্ট করতে হয়েছে এবং এতে করেই বলটিকে যে জায়গায় ফেলে দেওয়া আপানার বাসনা যে জায়গায়ই আপনি অনেক সময় বলটি ফেলতে পারেন। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের ‘ব্যক্তিত্বের বিকাশ’ গ্রন্থে একজন মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার এ তাগিদ , এ আহবান আমাদের সবার জীবনকে আমূল পালটে দেবে বলে আশা করি।
দেওয়ান মােহাম্মদ আজরফ ১৯০৬ সালের ২৫ অক্টোবর, ১৩১৩ বাংলার ৯ কার্তিক শুক্রবার সুনামগঞ্জ শহরে মাতামহ বিশ্বখ্যাত মরমি কবি ও জমিদার হাসন রাজার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। জমিদার পরিবারে সােনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও নিজ পারিবারিক পরিবেশেই তাঁর শিক্ষারম্ভ হয়। ১৯১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে ভর্তি করা হয় গ্রামের স্কুলে। পরবর্তী সময়ে সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুলে ভর্তি হন। অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ১৯৫২ সালে তিনি সিলেট এম.সি. কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৭ সালে ওই কলেজ হতে আই.এ. এবং ১৯৩০ সালে বি.এ. পাস করেন। ১৯৩২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পর ১৯৩৭ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় গােপালগঞ্জ এমসি একাডেমী স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে। পরে এম.সি. কলেজে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এ সময় তিনি অবিভক্ত ভারতের রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৬ সালে আসাম আইনসভার উচ্চ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদন্দ্বিতায়। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত “সৈনিক” ভাষাসংগ্রামােজ্জ্বল এক প্রামাণ্য সাপ্তাহিক। কিন্তু অচিরেই তিনি রাজনীতির প্রতি বিমুখ হয়ে ফিরে আসেন শিক্ষকতা পেশায় । সুমানগঞ্জ কলেজের উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ, নরসিংদী কলেজের অধ্যক্ষ, মতলব কলেজের অধ্যক্ষ এবং পরবর্তী সময়ে রাজধানী ঢাকায় স্বীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আবুজর গিফারী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবন অতিবাহিত করেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মােহাম্মদ আজরফ দর্শন ও ধর্ম নিয়ে আজীবন লেখালেখি করেছেন। অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ “স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার”, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরষ্কার”, “নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক পুরষ্কার”, “একুশে পদকসহ অর্ধশতাধিক পুরষ্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ভারত, ইরান, কোরিয়া, জাপান, ইতালি, সৌদি আরব ও মিসরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দর্শন ও ধর্মসভায় যােগদান করেছেন। জীবদ্দশায় তার ৪০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এছাড়া অসংখ্য অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি রেখে গেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ১ নভেম্বর অধ্যক্ষ দেওয়ান মােহাম্মদ আজরফ ইন্তেকাল করেন।