রবি ঠাকুর মানেই বিচিত্রতা, রবি ঠাকুর মানেই ভাবের গভীরতা। প্রকৃতি ও মানবজীবনের সম্পর্কের সমীকরণ মেলানোই যেন ছিল তাঁর সাহিত্যচর্চার জীবনসুধা। এ যেন জগতের সাথে জীবনের সম্পর্ক স্থাপন। পূর্বাহ্নে কবি কাব্যসাহিত্যের মাঝে খুঁজে ফিরছিলেন সৃষ্টিরহস্য; কিন্তু অপরাহ্নে নিজেকে আবিষ্কার করলেন মানবের মাঝে। কবি থেকে হয়ে উঠলেন এক নীরব ব্রতচারী। দীক্ষা নিলেন মানবকল্যাণের। কল্পনা থেকে পদার্পণ করলেন যাপিত জীবনে। সাহিত্যরসের কবি হয়ে উঠলেন মানবিক কবি। লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করলেন সমাজ ও রাষ্ট্রের হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বিষয়গুলো। সাহিত্যের সব্যসাচী তাঁর সৃজনে অনুভব করলেন জীবনদর্শনকে, মানবিকতাবোধকে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ থেকে উৎসারিত নৈতিকতা আর আত্মবোধের প্রয়োজনকে। বিবেকের গরজ থেকেই মানবের তরে করলেন স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্বের গবেষণা। স্বর্গ থেকে কবি যেন নেমে এলেন মর্তে। কবিগুরু তাঁর `মানুষের ধর্ম নামক গ্রন্থে লিখেছেন : “ধর্ম মানেই মনুষ্যত্বÑ যেমন আগুনের ধর্ম অগ্নিত্ব, পশুর ধর্ম পশুত্ব। তেমনি মানুষের ধর্ম মানুষের পরিপূর্ণতা।” অর্থাৎ রবীন্দ্রদর্শনের একটি মৌলিক দিক হচ্ছে মনুষ্যত্ব, জাত-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলাই যায় -‘মানুষ-ই রবীন্দ্রদর্শন । রবীন্দ্রসাহিত্য-সুধা আমরা সকলেই আস্বাদন করেছি বৈকি; কিন্তু তাঁর জীবনমুখী শিক্ষা, সমাজসচেতনতা, রাষ্ট্রচিন্তা ও আত্মচিন্তার ফিরিস্তি আমরা কজনে রেখেছি! মোটা দাগে এ কয়েকটা বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। প্রত্যাশা-কিছুটা হলেও মানবিক ও জীবনঘনিষ্ঠ রবীন্দ্রদর্শন সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি করা।
সুভাষ সিংহ রায়, জন্ম ১৯৬৬ সালে, যশাের জেলায়, বিখ্যাত সিংহ রায় পরিবারে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাগ্মিতা তার রক্তে। পেশায় ওষুধ বিজ্ঞানী, প্রবলভাবে রাজনীতি করেন, একসময় তুখােড় ছাত্রনেতা ছিলেন। লিখতে শুরু করেছেন বেশ আগে থেকেই, কলামিস্ট হিসেবে নানা পত্রিকায়। বাংলাদেশের বিতর্ক চর্চায় যে ক'জন নতুন ধারা সূচনা করেন সুভাষ অবশ্যই তাদের অন্যতম। সুভাষ আপদমস্তক প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন মানুষ, যিনি ইস্পাতকে ইস্পাতই বলেন। সমাজ ও মানুষকে তিনি বিশ্লেষণ করেন পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে খাপখােলা ধারালাে তলােয়ারের মতাে শাণিত শব্দাবলি, সত্য তবে বিদ্ধ করে হৃদয় নির্ভয় উক্তি তার, এজন্য তিনি লেখক হিসেবে একেবারেই অন্যরকম।