দিন ফিরিবার নয়, দিন ফিরিল না বিনোদিনী দাসী (আমার কথা বইয়ের সিলেক্টিভ অংশ) পাবলিশার’স নোট বিনোদিনী দাসী তাঁর ‘আমার কথা’ বইটা পাবলিশ করেন বাংলা ১৩১৯ সালে। এক বছর পরেই কিছু জিনিস ইনকরপোরেট কইরা সেইটার নতুন ভার্সন ছাপান। পত্র-ভারতী থিকা ছাপানো দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত “বিনোদিনী রচনাসমগ্র” (২০১৪) এবং সুবর্ণরেখা থিকা নির্মাল্য আচার্য় সম্পাদিত “বিনোদিনী দাসী: আমার কথা ও অন্যান্য রচনা” (১৯৬৯) বই দুইটাতে এই টেক্সটটা পাওয়া যায়। একটা সময়ে (১৮৭৪ – ১৮৮৬) বিনোদিনী দাসী থিয়েটারের নায়িকা হিসাবে জনপ্রিয় ছিলেন কলকাতা শহরে। ফিমেইল সেলিব্রেটিই বলতে হবে উনারে। কিন্তু উনার এই টেক্সট আসলে উনার অভিনয়রে একসিড কইরা গেছে। একটা তো হইতেছে – বলা, উনি যে বলতে চাইছেন উনার লাইফের ঘটনাগুলা – এইটাই একটা ঘটনা; সেকেন্ডলি যেইভাবে উনি লিখছেন – সেইখানে একটা ইথিক্যাল বাউন্ডারিরে উনি মাইনা নিতে বাধ্য হইছেন, কিন্তু মানাটা যে একটা না-মানা, সেইটা হাইড করতে রাজি হন নাই। মেমোয়ার্সে যা হয়, আপনি তো কিছু জিনিস বলবেন আর কিছু জিনিস বলবেন না (মানে, ধরেন ভুইলাই যাবেন); কিন্তু কি ঘটতেছে সেইটা তো আর ঘটনা না, ঘটনা হইলো কিভাবে আমরা বলতেছি। একটা মেইল গেইজের রিয়ালিটিতে ফিমেইল এগজিসটেন্সরে এই টেক্সটটা রিভিল কইরা ফেলে; আরে, এ তো দেখি খালি নারী-ভাবনা না! এমনিতে টেক্সটটারে সিমপ্যাথিটিক্যালি পড়ার একটা অভ্যাস তো আছে এখন, কিন্তু এই সিমপ্যাথিটা কনটিনিউ করাটা মাঝে-মধ্যে টাফ-ই হয়া উঠে। কেন যে? এইরকম কোশ্চেন যখন আসে তখন বিষাদের বনে হারায়া না গেলে ইউরোপিয়ান ফেমিনিজমের বাইরে কি কি ভাবে আমরা নারীবাদ পাইতে পারতাম তার কিছু আসপেক্ট চোখে পড়তে পারে। ২. বিনোদিনী দাসী প্রেম, বিয়া বা অন্যান্য সোশ্যাল রিলেশনের চাইতে উনার প্রফেশন’রে প্রায়োরিটি দিতে চাইছিলেন; একট্রেস হওয়াতেই থাইমা থাকতে চান নাই, থিয়েটারের মালিকানা চাইছিলেন। প্রেমের প্রতারণাগুলিরে ইগনোর করতে পারলেও সোশ্যাল রিলেশনের প্যাঁচগুলি পার হইতে পারেন নাই। উনারে নিয়া বানানো নাটক-সিনেমাগুলিতে উনারে এতো বড় একট্রেস বানানো হয় যে মনে হইতে পারে – এইগুলা উনি চান নাই! বা পরে হয়তো একভাবে নেগোশিয়েনও করতে চাইছেন এইভাবে যে, এইগুলা চাওয়া উনার ঠিক হয় নাই। কিন্তু সারভাইভ করা সম্ভব হয় নাই আর। গিরিশবাবুরে গুরু মানলেও, গুরু লালন-ভক্ত না হইলেও মেবি জানতেন সাধন-সিদ্ধির মতো মাইয়াদের মালিকানাও হইতে নাই! ৩. বাঈজিরা কিভাবে নন-কলোনিয়ান ফেমিনিজমের সম্ভাবনা ছিলেন বা হইতে পারতেন - এর লাস্ট স্টেইজটা কিছুটা দেখা যায় বিনোদিনী দাসী’র টাইমে আইসা। কলোনিয়ান টাইম শুরু হওয়ার পরে বাঈজী শব্দটা বেশ্যা’র সিনোনেইমস হইতে পারছে। লখনৌ থিকা দিল্লী হয়া কলকাতা’তে হিজরত কইরা মরতে পারছে প্রি-কলোনিয়াল এই আর্ট কালচারগুলা। হিস্ট্রিতে ‘কলকাতা’ পিরিয়ড’টা সবচে মরবিড একটা টাইম হিসাবে আইডেন্টিফাইড হওয়ার কথা। যার একটা এলিমেন্ট অবশ্যই সোসাইটিতে ইন্ডিপেন্ডেড উইমেনের জায়গাটারে আরো ন্যারো কইরা তোলা। ইউরোপের ভিক্টোরিয়ান এইজ রেপ্লিকেট হইছে কলকাতায়। শরীর বাজে জিনিস একটা। বাঈজীদের নাচা-গানাও মেইনলি শরীর বেচারই ধান্দা। এই যে ‘আল্টিমেট’রে বুইঝা ফেললাম আমরা, তখন অন্য সবকিছু হাওয়া হয়া গেলো। ওমরাওজান সিনেমাতে রেখা কবিতাই লিখতেছেন, তারপরও যতোটা না বাঈজী তার চাইতে বেশ্যাই। একটা সিঙ্গুলার সোসাইটিতে সিঙ্গুলার আইডেন্টিটি নিয়া থাকতে থাকাটাই ঘটনা। কেমনে আপনি টাকা রোজগার করেন সেইটাই হইতেছেন ‘আসল’ আপনি। এই থট প্রসেসে বিনোদিনীও সাবস্ক্রাইব করছেন আর বারবার মাফ চাইছেন যে, উনি তো ‘ভালো’ মেয়েমানুষ না। মুশকিল হইলো, একটা ভালোর এগেনেস্টে একটা খারাপরেই আপহোল্ড করতে হইছে উনারে। উনার রিডার’রাও এই আক্ষেপে স্যাড হওয়ার বেশি কিছু করতে পারবেন বইলা মনেহয় না। কারণ কম বা বেশি আমরা এই চিন্তা-পদ্ধতিরই ভেড়া। ঘটনা এইটা না যে, বিনোদিনী দাসী কি পারছেন বা পারেন নাই, বরং উনার অ্যাক্টটারে উনি বা আমরা কিভাবে রিড করতেছি – সেইটাই ঘটনা। ট্রাজেডি এইটা না যে উনি কাছের মানুষদের দিয়া প্রতারিত হইছেন উনার প্রফেশনাল লাইফে, কিন্তু এখনো এই ট্রিকসটারে ‘বাস্তবতা’ বইলা মাইনা নিয়া উদাস হইতে রাজি থাকতে পারতেছি আমরা। তো, বিনোদিনী দাসী’র এই টেক্সট উদাসীনতা আর বিষন্নতার বাইরে একটা অস্বস্তিরেও ইনসার্ট করতে পারে হয়তো। আমাদের উদ্দেশ্য এইটুক সিগনিফিকেন্সরেই হাইলাইট করতে চাওয়া।