মানুষের ওপর আল্লাহর হক অধিকার হলো মানুষ তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন ইবাদাত হলো সালাত। সালাত সর্বপ্রথম ফরয হওয়া ইবাদাত। অন্য সকল ইবাদাত ফরয হয়েছে যমীনে, জিবরীল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে। সালাত ফরয হয়েছে সপ্তম আকাশের ওপরে। মিরাজের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর খুব কাছাকাছি পৌঁছে ছিলেন- তখন আল্লাহ সরাসরি সালাত ফরয করেছেন। সালাত- এমন একটি ইবাদাত যাতে বান্দার গোটা দেহ সঞ্চালিত হয়। আর তার সাথে সংযুক্ত করতে হয় কালব তথা হৃদয়কে। দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা ও একনিষ্ঠভাবে বসার মাধ্যমে রবের প্রতি বান্দার চরম বিনয়ের প্রকাশ ঘটে। সালাতে বান্দা তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। এমন সালাতই অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বান্দাকে বিরত রাখে। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণিত, 'যাকে সালাত অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে না। তার এ সালাত আল্লাহ থেকে তার দূরত্ব বাড়ায়।* ইমরান বিন হুসাইন (রাদি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর বক্তব্য, “নিশ্চয় সালাত অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে”- সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- যাকে তার সালাত অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে না, তার জন্য সালাত নেই।” অর্থ্যাৎ তার সালাত হয় না। এর থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে, সালাতের বিধি-বিধান যথাযথ অনুসরণ করে সালাত আদায় করলেই সালাত হবে না। যদি না সালাতের মাধ্যমে সালাতের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। আর তাহলো সালাত সকল ধরনের অশ্লীল কথা ও কাজ এবং অন্যায় ও অপরাধ থেকে বিরত রাখবে। সালাতের কাঙ্ক্ষিত এ উদ্দেশ্য তখনি অর্জিত হবে, যখন সালাতে বান্দা তাঁর রবকে দেখে। সে রবকে দেখতে না পারলেও তারমধ্যে এ চেতনা জাগ্রত থাকে যে, রব তাকে দেখছে। সালাতে সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে । সালাতের শুরু হয় তাকবীর তাহরীম- আল্লাহু আকবার বলার মাধ্যমে, আর সমাপ্তি হয় সালামের মাধ্যমে। সালাতের মধ্যে বান্দা দাঁড়ায়, রুকু করে, সিজদাহ দেয়, বসে। সালাতের এ চারটি অবস্থানে বান্দা তার রবকে উদ্দেশ্য করে কথা বলে। তাঁর সামনে বিনয়ী হয়। তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ হয়। সালাত শেষ করেও কিছু সময় সে বসে থাকে। রবের পবিত্রতা, প্রশংসা ও শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দেয়। রবের যিক্র করে। নিজের মত করে নয় বরং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখানো পদ্ধতিতে । সালাত- রবের সাথে বান্দার একান্তে সাক্ষাত বইতে কুরআন ও বিশুদ্ধ সুন্নার আলোকে সালাতের উপর্যুক্ত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে, আমার পরিবারের সকল সদস্যকে এবং সালাত আদায়কারী তাঁর সকল বান্দাকে এমন সালাত আদায় করার তাওফীক দিন, যে সালাত আদায়কারীদের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, 'সফল হয়েছে মুমিনরা, যারা তাদের সালাতে বিনয়ী... যারা নিজেদের সালাতকে হিফাজত তথা সংরক্ষণ করে। তারাই হবে ওয়ারিস, যারা ফিরদাউসের অধিকারী হবে। তারা সেখানে থাকবে স্থায়ীভাবে।' খুব কাছ থেকে লেখা-লেখিতে আমাকে যিনি প্রেরণা দেন ও সহযোগিতা করেন, তিনি হলেন আমার জীবন সঙ্গিনী ও সহধর্মিনী ফাতেমা রশীদ। আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিন। তাকে, আমাকে, আমাদের দুসন্তান ও তাদের স্ত্রী ও স্বামীকে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যথাযথ অনুসরণ করে নিষ্ঠার সাথে তাঁর দাসত্ব ও গোলামী করার তাওফীক দিয়ে উত্তম আবাসস্থল জান্নাতের স্থায়ী অধিবাসী বানান।