বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।
বইঃ ঘরে বাইরে লেখকঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকাশঃ ১৯১৬ (প্রথম প্রকাশ) প্রকাশনীঃ ঝিনুক (রকমারি থেকে দেয়া) এটির প্রকাশকাল ২০১০ মূল্যঃ ১১৭ (ছাড়ে) ধরনঃ রাজনৈতিক উপন্যাস
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রথম চলিত ভাষার উপন্যাস এটি।
সারসংক্ষেপ ঃ বিমলা, নিখিলেশ আর সন্দীপ, এই তিনজনের আত্মকথা দিয়ে বইটির এক এক পরিচ্ছেদ। বিমলা,শ্যামলা বর্নের। রাজার ঘরে তার বিয়ে হল, সাবেকি আমলের গন্ডির বাইরে বের হতে পারেনি।স্বামীর পরামর্শে মিস গিলবির তাকে ঘরের বাইরে আনার প্রয়াস। নিখিলেশ, বিমলার স্বামী, শ্বশুরবাড়ির একমাত্র জীবিত পুরুষ সদস্য।চলিত ঘরানার বাইরে গিয়ে এম এ পাস করেছেন, নিজের স্ত্রী আনতে চেয়েছেন ঘরের বাইরে, তোলা সিন্দুকের মত রাখতে চাননি তাকে, কি থেকেও যেন নেই, সারাক্ষণ তার মনে কিসের খচখচ? সন্দীপ, নিখিলেশের বন্ধু , দেশ ভক্তির উজ্জ্বল উদাহরণ। নিখিলেশ এর খুব ভালো বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও কোথায় যেন এক মস্ত ব্যবধান! মস্ত অমিল। স্বদেশী আন্দোলনের কর্মী, একনিষ্ঠ কর্মী। নিখিলেশের এলাকাতে আসে স্বদেশী আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করতে। নিখিলেশ এর বিমলা কে বাইরে আনা, স্বদেশী আন্দোলনের ময়দানে আনে। ইংলিশ গান, ইংলিশ কথা শেখান গিলবি। আবার অন্যদিকে স্বদেশী। নিখিলেশ এক অদ্ভুত মানুষ।
তিনজনের জীবনবোধ আর রাজনৈতিক বোধ ভিন্ন করম। তিন চরিত্র বাংলার তিন ভিন্ন ধারার চিন্তা-বিশ্বাসের মানুষ। তাদের চিন্তা-ভাবনা-সামাজিক-রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য ঠিক সেদিনের বাংলা উপমহাদেশ বোধহয়। চাওয়া-পাওয়া আলাদা। আছে মানসিক টানাপড়েনের, আবার সম্পর্কের টানাপড়েন। নিখিল অন্য জগতের বাসিন্দা। সন্দীপের কিংবা নিখিলের আদর্শ জানতে বইটা পড়েন।সন্দীপের বিমলার প্রতি কোন এক টান, মক্ষীরানী বলে সম্বোধন করে। তিন ধারার এই তিন মানুষের জীবনে কি ঘটবে??? কেন আলদা নিখিলেশ আর দশ টা জমিদার থেকে? বিমলা কি সন্দীপের কাছে যাবে? না আঁকড়ে থাকবে নিখিলেশ কে??
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইয়ে ভাল লাগার অনেকগুলো কথা আছে।বিমলা-নিখিলেশ-সন্দীপ তিন জনের প্রতিটা কোথা এত সুন্দর, এত ভাল লাগবে, সেটা বলার বাইরে।বিমলার একটা কথা পাঠকের মাথায় প্রথমেই আঘাত আনবেই আনবে “আমাদের দেশে তাকেই বলে সুন্দর যার বর্ণ গৌর। কিন্তু যে আকাশ আলো দেয় সে যে নীল”। এই কথার গভীরত্ব কতখানি? আবার নিখিলের কথা “সত্যের সম্পুর্ণ অনাবৃত রূপ সহ্য করবার শক্তি আমার আছে এই অহঙ্কার আমার মনে ছিল, আজ তার পরীক্ষা হচ্ছে”। সন্দীপের কথা, “ যেটুকু আমার ভাগ্যে এসে পড়েছে সেইটুকুই আমার, এ কথা অক্ষমেরা বলে আর দুর্বলেরা শোনে”।
এই রকমের অনেক অনেক কথা, আপনার মনে হবে এটা হয়তো আপনারি মনের কথা, কবিগুরুর লেখা আসলে মন্তব্য করা কঠিন। তারপর অ করি, নিখিলেশ চরিত্র টা আমার পছন্দের, আমার মনে হয় পাঠকদেরও ভালো লাগবে, আবার বিমলা আর সন্দীপ চরিত্র দুটি খারাপ লাগার কারণ নেই। ভাল লাগবে............