১৯৭১ সাল। দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিকামী মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ডাকে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আশা ছিল দেশ স্বাধীন হবে, মানুষে মানুষে বৈষম্য কমবে, সামাজিক ন্যায় বিচার, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শাহাদত সাহেব বয়সে তরুণ, মা যুদ্ধে যেতে দিতে রাজী না হলেও ছেলের যুক্তির কাছে হার মানলেন। অবশেষে একমাত্র সন্তানের কপালে একটা চুমু দিয়ে কান্নাভাঙ্গা গলায় বললেন, যা বাবা, আমি তোকে দেশের জন্য উৎসর্গ করলাম, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ফিরে আসিস। শাহাদত সাহেব মায়ের কথা রেখেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যখন দেশে ফিরেছেন তখন তার চোখের সামনে তাদের ভস্মীভূত বাড়ি আর বিদায়লগ্নে মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠস্বর স্মৃতি হয়ে ভাসছে। তিনি আপনমনে বিড়বিড় করে বলতে শুরু করলেন, স্বাধীনতা, হায় স্বাধীনতা, তুমি এলে না, তোমাকে আমাদের ছিনিয়ে আনতে হলো রক্তের বিনিময়ে, মায়ের জীবনের বিনিময়ে... শাহাদত সাহেবের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক বিস্তর, মানুষে মানুষে সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে, এক শ্রেণির মানুষ রাতারাতি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছে আরেক শ্রেণির মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে বিত্তহীন মানুষে পরিণত হচ্ছে। কয়েক দশক আগে দেশের এক ইঞ্চি মাটির জন্য জীবন উৎসর্গ করা জাতির সন্তানদের বিবেক-বুদ্ধি, নীতি-নৈতিকতা, দেশপ্রেম দেখে তিনি হতাশ হলেন। জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের কাহিনি নিয়ে কথাসাহিত্যিক জিল্লুর রহমানের লেখা উপন্যাস, শেষ অধ্যায়”।