আমি শুরুতেই সম্মানিত পাঠকদের অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, আমি কোনও লেখক নই। পেশায় আমি একজন ব্যাংকার। আর আমরা সবাই জানি ব্যাংকিং একটি সার্বক্ষণিক জবাবদিহিতা ও সেবামূলক পেশা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও দাপ্তরিক প্রয়োজনে বা পেশাগত কারণে সভা—সেমিনার কিংবা গ্রাহকদের সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে নিয়মিত যোগদান করতে হয়। এতকিছু করার পর সময় বের করা আমাদের জন্য সত্যিই কষ্টকর। দীর্ঘদিন ধরে ভাবছি কিছু একটা লিখি। কিন্তু লেখার অভ্যাস না থাকায় লিখতে সাহস পাচ্ছিলাম না। বিগত কয়েক বছরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ আমাদের ছেড়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে অসময়ে ইহকাল ত্যাগ করে পরকালের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং তাঁদের সাধ্যানুযায়ী আমাদের পিছিয়ে থাকা সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন। তাঁদের এই অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এদের মধ্যে অনেকেই সম্ভাবনাময় ছিলেন। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে তাঁদের অন্তত আরও কিছুদিন বেঁচে থাকা দরকার ছিল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তাঁরা বেঁচে থাকলে আমাদের এ সমাজ আরও উপকৃত হতো। তাঁদের একে একে চলে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় আমার স্মৃতিচারণমূলক কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ায় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু—বান্ধব ও শোভাকাঙ্ক্ষী এগুলো সংগ্রহ করে পুস্তক আকারে প্রকাশ করার জন্য বারবার তাগিদ দেন। আর তাঁদের সেই অব্যাহত তাগিদ দেওয়ার প্রেক্ষিতে আমি পুস্তকটি প্রকাশ করার সাহস পেয়েছি। যেহেতু এটি আমার লেখা প্রথম পুস্তক সেহেতু ভুল—ভ্রান্তি থাকা স্বাভাবিক। আমার এ অনিচ্ছাকৃত ভুল—ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে সঠিক পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করলে আমি সংশোধন করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমি এ পুস্তকটিতে আমাদের বিশ্বনাথ এলাকার বিভিন্ন বয়সের প্রয়াত ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। যারা সমাজে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত, সম্ভাবনাময় ও মৃত্যুর পর ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিলেন এবং আমার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল আমি শুধু তাঁদেরকেই প্রাধান্য দিয়েছি। এলাকার বাইরে আমার একজন শিক্ষক, একজন সংসদ সদস্য ও একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সম্পর্কে লিখেছি, যাদের অবদান সমাজের পাশাপাশি আমার ব্যক্তিজীবনে ও অনেক বেশি ছিল। এছাড়া আমি আমার বাবার কথা লিখেছি। আমার বাবা ছিলেন আমার আদর্শ। তাঁর নির্লোভ সাদাসিধে জীবন সব সময়ে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে অন্যান্য গুণিজন সম্পর্কেও লেখার চেষ্টা করব। পরিশেষে আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি আমার শ্রদ্ধেয় বড়ো ভাই কবি সাইদুর রহমান সাঈদের প্রতি, তিনি আমাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান করেছেন বইটি প্রকাশ করার জন্য। ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার ছেলের বন্ধু চুয়েটের মেধাবী ছাত্র বিজয় নাথকে বইটির প্রচ্ছদ অঙ্কন করার জন্য। আমি ঋণি রাগীব—রাবেয়া ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনুজপ্রতিম সাহিত্যিক খালেদ উদ—দীনের কাছে, তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বইটি এত অল্প সময়ে প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। সবশেষে আমি আমার সকল বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীসহ যাঁরা আমাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে পুস্তকটি প্রকাশ করতে সাহায্য—সহযোগিতা করেছেন তাঁদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।