সমুদ্রের বক্ষে উচ্ছ্বসিত তরঙ্গমালার মতো একটি ঢেউ ভেঙে যেমন আরেকটি ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি ব্রিটিশ কর্তৃক এদেশের আগমনের পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে একটি দেশের স্বাধীনতা হরণ, আবার তা উদ্ধার করতে ত্যাগ ‘হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া কোনো’ বিপ্লব ছিল না। বিপ্লবের একটির সফলতার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি বিপ্লব অনিবার্য হয়ে পড়ে। বিপ্লবের শেষ বলে কোনো কথা নেই, দেশ বলেও কোনো কথা নেই। বিপ্লবের সাফল্যও স্থায়ী নয়। তার কার্যকারিতাও অনন্ত। ইংরেজ শাসক সৃষ্ট ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কাহিনি, নীলকর, বর্গি ও ঠগি দমনের নামে বিভিন্ন অত্যাচারের কাহিনি, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের কাহিনি, কাবুলিওয়ালাদের কবর পিটিয়ে টাকা আদায়ের কাহিনি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী-যুদ্ধসৃষ্ট ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষের কাহিনি আজও ভোলার নয়। মির কাসেমের যুদ্ধ, ফকির মজনু শাহের বিদ্রোহ, হাজি শরীয়তউল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলন, হাজি তিতুমিরের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ১৮৫৭ সালে অনুষ্ঠিত সিপাহিবিদ্রোহ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ, ১৯০৬ সালে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে বাঙালি তথা উপমহাদেশের মুসলিম-হিন্দুরা নিজেদের জন্য এক স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ব্রিটিশরা এ দেশে শাসনের জন্য যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্থাপন করে পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পরও পাকিস্তানি সরকার কর্তৃক তা চলতে থাকে। ১৯৪৭ সালের পরবর্তী সময়ে তৎকালীন পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু না হওয়ার কারণে এবং দেশের প্রধান নির্বাহীর ইচ্ছানুযায়ী প্রশাসকরা কাজ করতেন।