পটভূমি ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭, মঙ্গলবার, সকাল ১০টা ২৪ মিনিট। ঢাকার আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্মলগ্ন। মুহূর্তটি ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের। শিল্পী শাহাবুদ্দিনের স্বাধীনতার পতাকা আর অ, আ, ক, খ বর্ণমালা আঁকা তৈলচিত্রের নিচে রাখা টেবিলের একপ্রান্তে বসেছিলেন দুই নেতা-আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বসেছিলেন অপর চেয়ারটিতে। মুখোমুখি দুই সারির একটিতে মন্ত্রিসভার সদস্য, অপর সারিতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটি, জনসংহতির নেতা ও স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে। মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্য অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীসহ সবার। মুখে স্মিত হাসি বিজয়ের। বিশেষ দুটি কলম হাতে তুলে নিলেন দুই নেতা-আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সন্তু লারমা। পনেরো পৃষ্ঠার চূড়ান্ত চুক্তির দুটি ফাইলে বাংলায় পরপর স্বাক্ষর করলেন দুইজন। একজন ফাইল তুলে দিলেন আরেকজনের হাতে। চারদিকে উচ্ছ্বাস আর অসংখ্য ক্যামেরার ফ্ল্যাশ। উপস্থিত সবার হৃদয়জুড়ে মঙ্গল আর শান্তির প্রার্থনা। দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা বিভেদ, হানাহানি, জাতিগত সংঘাতের দিনগুলো পেছনে ফেলে নতুন পথ চলার শুরু। যে পথ শান্তির, যে পথ কল্যাণের। মুহূর্তটি সৃষ্টির কারিকর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের জুনে ক্ষমতা গ্রহণের পর মাত্র ১৭ মাসের মধ্যে তাঁর আন্তরিকতা আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিরোধীয় পক্ষগুলো মিলল মিলনমোহনায়। মাত্র ১৭ মাস সময়ের মধ্যে এ ধরনের একটি সম্মানজনক সাংবিধানিক সমাধান, তা অনেক অতি আশাবাদীরও ছিল কল্পনার বাইরে। অথচ এই হিরণ্ময় মুহূর্তে সেটিই বাস্তবতা। এখানে সবাই মিলেছে হৃদয়ে হৃদয়ে। শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়ের। দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা বন-বনানী, পাহাড়-পর্বত আর সবুজে ঘেরা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতের শিকড়ের সন্ধানে আমাদের আলো ফেলতে হবে সুদূর অতীতের গর্ভে। সৃষ্ট সংকট, সংঘাতে গড়াতে নিয়েছে দীর্ঘ সময়। প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের হিংস্রতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে রচিত হয়েছে একটি রক্তক্ষয়ী অধ্যায়। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সংকট রূপ নিয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি গড়ে ওঠার ইতিহাসে দৃষ্টি ফেলে আমরা দেখি, চাকমা রাজা মংদুই ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দে বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) থেকে বিতাড়িত হয়ে রামু, টেকনাফ প্রভৃতি অঞ্চলে আশ্রয় নেন।
Title
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সংবাদপত্রে প্রতিফলন - প্রথম খণ্ড