প্রথম ফ্ল্যাপ “...বিশ ত্রিশ গজ সামনে এগোতেই কানে তালা লাগিয়ে বৈরুতের হাজার হাজার মেশিন গান কামান ও বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র গর্জে উঠলো এক সাথে। এর অর্থ হচ্ছে একটাই, ইসরাইলী বিমান ঢুকেছে বৈরুতের আকাশে। আমরা মাথা তুলে উপরের দিকে তাকালাম। দেখলাম পাঁচটি ইসরাইলী বিমানের একটি বহর আমাদের অস্ত্রের নাগালের বাইরে অনেক উপর দিয়ে উড়ে আসছে। আর তখনি আকাশ থেকে চুওওওও শব্দে বাতাসে শীস্ কেটে কিছু একটা নেমে আসার শব্দ এলো কানে। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি সমূহ বিপদ। নীলচে কালো একটি ইসরাইলী বোমা বাতাসে শীস্ কেটে দ্রæত ছুটে আসতে দেখলাম আমাদের দিকে। হাতের ড্রিংকস ছুড়ে ফেললাম আমি আর সাদী এক সাথে মাটিতে ডাইভ দিয়ে পড়লাম। প্রশিক্ষণ অনুযায়ী কানে হাত চাপা দিলাম। কনুইতে শরীরের ভর রেখে মাটি থেকে বুক উপরে তুলে উপোড় হয়ে শুয়ে থাকলাম দুজনে। আর সাথে সাথেই কানে তালা দেওয়া বিস্ফোরণ ঘটলো কাছাকাছি। একটা নয় ক্ষাণিক বিরতি দিয়ে পর পর দুটো বোমা ভীষণ আওয়াজে ফেটে পড়লো উপর্যুপরি। যুদ্ধ বিমান সরে যেতে গায়ের ধূলো বালি ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়ালাম আমরা। তারপরই ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে যা দেখলাম তাতে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমরা। এইমাত্র যাদের দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম কোল্ড ড্রিংকস হাতে সেটি এখন একটি ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই নয়। সাদী আর আমি চিৎকার দিয়ে দৌড় লাগালাম সেদিকে। চিল চিৎকারে ছুটে আসতে থাকলো আ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, পিএলওর বেশ ক’টি দল, কামানবাহী গাড়ি ইত্যাদি। নিজের চোখকেও যেনো বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছিলো। এই ক্ষাণিক আগেও চারতলা একটি ভবন ছিলো এখানে। একটি পরিবারের দুটি প্রাণবন্ত সুন্দরী তরুণী ছিলো এ দোকানে। আর সামান্য সময়ের ব্যবধানে এখন তারা সবাই লাশ। আমার শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকলো। সাদীর কথা না শুনে তখন এখানে দাঁড়িয়ে ড্রিংকস খেলে এতোক্ষণে আমাদের পরিণতিও হতো তাদের মতোই। ভাবতেই শরীর অবশ হয়ে এলো আমার। মেয়ে দুটির জন্য মন খারাপ হলো খুব। তারচে বড়ো কথা এতোক্ষণে কি হতে পারতো আমাদের! নিজেদের পরিণতি কি হতে পারতো...” দ্বিতীয় ফ্ল্যাপ লেখক পরিচিতি আতাউর রহমান ফারুক এর জন্ম নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার মা তুলালয় চুলা গ্রামে। দশ ভাই ও দশ বোনের মধ্যে তেরোতম তিনি। তার বেড়ে উঠাসহ শিক্ষাজীবন কেটেছে নিজ বাড়ি মনোহরদী পৌর এলাকায়। ঢাকার পিডিবিতে চাকুরীর মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করলেও লেখা-লেখির টানে চাকুরি ছেড়ে ৮০’র দশকে নিজ এলাকায় ব্যবসা ও সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত হন। তৎকালীন প্রথম সারির দৈনিক বাংলার বাণী, রূপালী ও সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকার মনোহরদী প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দৈনিক গ্রামীণ দর্পণ এর বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক রূপালী’র ’রূপালী মেলা’র সহ-সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে মনোহরদী প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০০৭ খ্রি. পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ড হিসেবে মনোহরদী বাজার পরিচালনা কমিটির নির্বাচিত সভাপতি ও মনোহরদী থানা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় শিশুতোষ ছড়া, গল্প ও ভ্রমণ কাহিনি লিখে পাঠক মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। বর্তমানে দৈনিক বাংলাদেশ জার্নাল এর মনোহরদী প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত। মুন্নী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘সুন্দর বনের খাল নদী জঙ্গলে’ ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধে লেবাননের সন্মুখসারির গেরিলা যোদ্ধা আতাউর রহমান ফারুক। ’ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধের গেরিলা আমি’ গ্রন্থটি তার সে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ রোমাঞ্চকর ঘটনা সমূহের সরস একটি বর্ণনা। গ্রন্থটি সব মহলের পাঠক প্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।