১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর পূর্ব বাংলার প্রাতিষ্ঠানিক নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান এবং সেই সময় থেকেই এ অঞ্চলের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ আর নির্যাতনের শিকার হওয়া শুরু করে। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন এই স্বাধীনতা প্রকৃত স্বাধীনতা নয়। ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জ তথা ফরিদপুর অঞ্চলে দাওয়াল চাষীদের বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু তাতে নেতৃত্ব দেন, তিনি তাঁর এলাকায় সবাইকে সংগঠিত করেন, সভা সমাবেশ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্ঠায় পাকিস্তানি কর্ডন আইনে পরিবর্তন আসে। দাওয়াল চাষীদের দুঃখ দূর্দশার ভেতর ‘জিন্নাহ ফান্ড’ নামে আরেক বিপদেও বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ অঞ্চলের মানুষের পাশে থাকেন। সেই ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে দেশভাগের ফলে গোপালগঞ্জ অঞ্চল থেকে অনেক প্রতিযশা শিল্পী সাহিত্যিকের চলে যাওয়ার শূন্যতা পূরণে কোটালীপাড়া অঞ্চলের শিল্প সাহিত্যমনা তরুণ কিশোরেরা ‘সাঁঝের আসর শিল্পী গোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে তারা নিজেদের টাকায় যাত্রা-পালা, কবিতা, গানের আসরের আয়োজন করতেন। সেই শিল্পী গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য কোটালীপাড়ার পবনারপাড় গ্রামের চারণ কবি শেখ রোকন উদ্দিন তাঁর কবিতা ও গানে ১৯৪৮ সাল থেকে ‘ভাইজান’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শিষ্য হিসেবে সমাদৃত কবি রোকন বঙ্গবন্ধুর ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের নির্বাচনী গানেরও রচয়িতা। যার বেশির ভাগ গান বঙ্গবন্ধুর নামে, মূখ্য চরিত্রে বঙ্গবন্ধু। দাওয়াল বিদ্রোহের অব্যবহিত পর ১৯৫০ সালে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার, ১৯৫১ সালে গোপালগঞ্জ কোর্ট মুক্তি দেয়ার পরও তাঁকে আবার জেলে প্রেরণের ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ কবি রোকনের ১৯৫১ সালের একটি গানে অসাধারণভাবে ফুটে ওঠে, যা গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাসের গবেষণা মতে প্রথম গান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। যদিও কবি রোকনের ১৯৪৮ সালের আরেকটি গানে নামে এবং মূখ্য চরিত্রে বঙ্গবন্ধুকে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালের ঐতিহাসিক বিজয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবি রোকন লিখেন বিজয়ের গান, ১৮ ই মার্চ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর পর এবং তার একদিন আগে ভাইজানের জন্মদিনে ১৯৫৪ সালের ১৭ ই মার্চ লিখেন একটি দীর্ঘ কবিতা, যে কবিতাটিতেও নামে ও মূখ্য ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা ও গানের সময়কালকে বিবেচনা করলে পবনারপাড়ের কবি শেখ রোকন উদ্দিনের কবিতা ও গানকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রথম কবিতা ও গান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ‘১৯৪৭ পরবর্তী কোটালীপাড়ার কবিতা ও গানে বঙ্গবন্ধু’ বইটিতে ১৯৪৭ পরবর্তী কোটালীপাড়ার কবিতা ও গানে বঙ্গবন্ধুর বর্ণনা ছাড়াও ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর জন্ম, উল্লেখযোগ্য ঘটনা, দেশভাগ, দেশভাগ পরবর্তী গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়ার বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা আছে।