সৌভাগ্যক্রমে ওবায়েদ উল হক দীর্ঘ জীবন লাভ করেছিলেন; এবং সময়ের কোনো অপচয় করেন নি, সর্বদাই ব্যস্ত ছিলেন সৃষ্টিশীল কাজে। তাঁর কর্মক্ষেত্রও সংকীর্ণ ছিল না-ছিল বিস্তৃত। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন এবং পেশাগতভাবে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতায়। তিনটি ক্ষেত্রেই তাঁর সাফল্য ছিল অনন্যসাধারণ। চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যাপারে ওবায়েদ উল হকের পদক্ষেপ ছিল রীতিমতো দুঃসাহসী এক অগ্রপথিকের। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন দৃষ্টান্ত ও আদর্শস্বরূপ। বহু সাংবাদিককে তিনি হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিপর্যস্ত মুহূর্তে পাকিস্তানে পলাতক মালিক কর্তৃক পরিত্যক্ত পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকাকে নতুন নামে প্রকাশ করার কাজে নেতৃত্বদান এবং পত্রিকাটিকে নতুনভাবে গড়ে তোলার ঘটনাকেও দুঃসাহসিক না-বলে উপায় নেই। পূর্ববঙ্গ চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রগামীর ভূমিকা পালন করেছেন। ওদিকে সাহিত্যের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। কত মানুষের জীবনকে যে তিনি কতভাবে স্পর্শ ও অনুপ্রাণিত করেছেন, তার কিছু প্রমাণ পাওয়া যাবে স্মারকগ্রন্থের এই লেখাগুলোতে। অধিকাংশ লেখাই রচিত হয়েছে তাঁর প্রস্থানের পরে, তবে তাঁর জন্মদিনেও শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন কেউ কেউ; সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করেছেন। এই গ্রন্থের লেখকেরা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র এবং তাঁরা তাঁকে দেখেছেন নিজের মতো করেই। সামনে চলে এসেছে এই সত্য যে মানুষটি ছিলেন বহুমুখী; এবং যেদিক থেকেই দেখা যাক না কেন, ছিলেন অসামান্য। যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁদের প্রস্থানে আমরা মর্মাহত; এবং আমাদের বিশেষ রকমের দুঃখ এই যে প্রকাশনাটি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া গেল না। প্রয়াতদের মধ্যে রয়েছেন শামসুর রাহমান, সুভাষ দত্ত, সৈয়দ শামসুল হক, ফজল শাহাবুদ্দীন, তারেক মাসুদ, কামাল লোহানী, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, চাষী নজরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, করুণাময় গোস্বামী, মনজুরে মাওলা, আহমদ জামান চৌধুরী, সালেহ চৌধুরী, মহিউদ্দিন আহমদ, রিয়াজউদ্দিন আহমদ, আসাদুল হক ও রায়হান এম চৌধুরী। গ্রন্থের রচনাগুলো পাঁচ পর্বে ভাগ করা হলো। স্মরণ ও শ্রদ্ধা; ইংরেজিতে লেখা, আপনজনের শ্রদ্ধাঞ্জলি, সাক্ষাৎকার এবং তাঁর নিজের লেখা। রচনাক্রম লেখকদের জন্মতারিখ অনুযায়ী বিন্যস্ত করবার চেষ্টা করা হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।