“তবু জার্মানি" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ একদিকে ঢাকার প্রবল প্রমত্তা বুড়িগঙ্গা, অন্যদিকে জার্মানির। খরস্রোতা রাইন নদী। ভৌগােলিক দূরত্ব যতই থাক, ঢেউয়ের। ছোঁয়া নয়, তরঙ্গের আঘাত হাওয়ায় ছুটে আসছে। এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল গত মহা বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। কোথায় সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে যুদ্ধ বেঁধেছে ইংরেজ আর জার্মানিতে—তার ভয়াবহ থাবা এসে পড়ছে ঢাকা, বার্মা, কলকাতা, চিটাগাং । ধরণী কম্পমান অনর্গল ভূমিকম্পে । হিটলার, মুসােলিনি, চার্চিল—নামগুলাে ফিরছে সাধারণের মুখেমুখে। সেইসঙ্গে অতি নিষ্ঠুর গ্যাস চেম্বার, জুইসদের তাণ্ডব পৈশাচিক গণহত্যা। এশিয়ার জনসাধারণ পরিচিত হচ্ছে কতগুলাে শব্দ ও বিষয়ের সঙ্গে। রেশন কার্ড, লাইন ধরা, এআরপি, কালােবাজার। সবকিছুর জন্য দায়ী নাকি জার্মানদের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিদারুণ পরাজয় এবং অপমান। দিনে দিনে জমে থাকা গ্লানির তীব্র প্রতিশােধ নেওয়ার অদম্য স্পৃহা রণদেবতাকে জাগিয়ে তােলার প্রবল প্রচেষ্টা পুরােধা পুরুষ হের হিটলারের। শুধু অপমান নয়, জার্মান জাতির বিশ্বাস। জ্ঞানেগুণে, কলকারখানায়, প্রযুক্তির অগ্রসরে তারা তখনকার বৃহৎশক্তি গ্রেট ব্রিটেনের সমকক্ষ ও জার্মানদের দেহে বইছে বিশুদ্ধ নৰ্কিড নীল রক্তের প্রবাহ। আকাশছোঁয়া এই অহঙ্কার এবং পরবর্তীকালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মহা পরাজয় তাদের দম্ভকে দুমড়ে মুচড়ে চুরমার করে দিলেও আবার তারা মাথা তুলে দাঁড়াল। বাঁধল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । কেঁপে উঠল বিপুলা ধরণী। এটম নামের অভূতপূর্ব যন্ত্রদানবের শিকার হলাে পুবের সূর্য সন্তান গরবি জাপান। যুদ্ধের আসল সমাপ্তি সেখান থেকেই। ইতিপূর্বে ব্রিটিশদের ঘনঘন পশ্চাৎপদ পিছিয়ে আসা, পরে মিত্রশক্তি রাশিয়া ও আমেরিকার সহায়তায় আবার বিজয়ের গৌরব অর্জন। সেই মহা আতঙ্কের বিভীষিকার বিধ্বংসী চিহ্ন ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। যা শান্তিপিয়াসী মানুষকে নিরন্তর আঘাত করছে।
Rabeya Khatun বাবা মোহাম্মদ মুলুক চাঁদ। মা হামিদা খাতুন। চার সন্তানের জননী- সাগর কেকা প্রবাল কাকলী। বাবা ছিলেন সরকারী কর্মচারী। বদলীর চাকুরী। রাবেয়া খাতুনের শৈশব কৈশোর তাই কেটেছে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন শহরে ও পুরোনো ঢাকায়। মূলত ঔপন্যাসিক হলেও সাহিত্যের সব শাখায় রয়েছে তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ। লিখেছেন গবেষণাধর্মী গ্ৰন্থ, অসংখ্য ছোট গল্প, নাটক, ভ্ৰমণ কাহিনী, স্মৃতিকথা, কিশোর সাহিত্য। প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা পচাত্তর। এক সময় শিক্ষকতা করতেন। বর্তমানে লেখালেখির কাজে নিবেদিত । প্রিয় পাঠ্য সাহিত্য ছাড়াও জ্যোতিবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস। শখ দেশ ভ্ৰমণ। ঘুরেছেন বিশ্বের বিভিন্ন (দেশে। অবসরে প্রচুর গান শোনেন। চলিচ্চিত্র ও নাটক দেখেন। চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে তিনটি উপন্যাস । উপন্যাসের জন্য সম্মানিত রাষ্ট্ৰীয় পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমীসহ আরো দেড় ডজন পুরস্কারে ভূষিত।