“বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” অর্থ পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। রোগীকে আদর্শ আরোগ্য করার সম্পর্কে ডা. হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডিসিনের দ্বিতীয় সূত্রে উল্লেখ করেন “ আরোগ্য বিধানের সর্বোচ্চ আদর্শ হল দ্রুত, বিনাকষ্টে ও স্থায়িভাবে স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার করা; কিংবা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে, সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য ও নির্দোষ উপায়ে, সহজবোধ্য নীতির সাহায্যে সম্পূর্ণভাবে রোগের দূ্রীকরণ ও ধ্বংস সাধন করা।” ডা. হ্যানিম্যান দ্বিতীয় সূত্রে আদর্শ আরোগ্য করার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছেন। শর্তগুলো হল – ১। অতি অল্প সময়ের মধ্যে রোগীকে আরোগ্য করতে হবে, ২। রোগীকে কোন প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না, ৩। রোগীকে স্থায়ীভাবে আরোগ্য করতে হবে, যাতে রোগটি পুনরায় ফিরে না আসে, ৪। সম্পূর্ণভাবে রোগটি দূর করতে হবে। রোগ লক্ষণ হালকা বা তীব্র যাই হোক সবই দূর করতে হবে, ৫। আরোগ্য বিধান নির্দোষভাবে হতে হবে। যাতে তার মধ্যে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়। সুতরাং রোগীকে তার পূর্বের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে না পারলে এটি আদর্শ আরোগ্য বিধান হিসেবে গন্য হবে না। রোগীকে আদর্শ আরোগ্য করার জন্য আমাদেরকে হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কিন্তু হোমিওপ্যাথি হল মহা সমুদ্রের ন্যায় তা পাড়ি দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। আমি এই বইয়ে হোমিওপ্যাথির গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রথম যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাহলো হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহারে সাবধানতা। যেমন – আমরা কোন নিদ্রাহীন রোগীর কেসটেকিং, রেপার্টরি ও মেটেরিয়া মেডিকার জ্ঞান দ্বারা Sulphur নির্বাচন করলাম কিন্তু যদি আমাদের না জানা থাকে নিদ্রাহীন রোগীদের কে কখন Sulphur দিতে হয়। কারণ আমরা সাধারণত জানি যে Sulphur সকালে দিতে হয়, কিন্তু আমরা যদি না জানি নিদ্রাহীন রোগীকে রাতে Sulphur দিলে তার ঘুম বৃদ্ধি পায় এবং অন্যসময় দিলে নিদ্রাহীনতা বৃদ্ধিপায় তাহলে রোগী কষ্ট পাবে এবং আমাদের কষ্টটা বৃথা যাবে। এ ছাড়াও আমাদের পক্ষে অর্গাননের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী রোগীকে বিনা কষ্টে আরোগ্য করা সম্ভব হবে না। আবার অনেক সময় আমরা একুইট ঔষধের ক্রনিক ঔষধ বা ঔষধের চেইন সম্পর্কে না জানার কারণে রোগীকে স্থায়ীভাবে আরোগ্য করতে পারিনা। যেমন - মাইগ্রেনে আক্রান্ত একজন রোগীকে, যাকে প্রতিবার Bryonia alba দিলে তিনি আরোগ্য হন কিন্তু কিছুদিন পরপর তা আবার ফিরে আসে। তাকে স্থায়ী ভাবে আরোগ্য করতে হলে Natrum muriaticum এর উচ্চ শক্তি দিতে হবে। অর্থাৎ Bryonia alba এর ক্রনিক ঔষধ হল Natrum muriaticum। তাই রোগীকে স্থায়ী ভাবে আরোগ্য করতে হলে একুইট ঔষধের ক্রনিক ঔষধ বা ঔষধের চেইন সম্পর্কে জানতে হবে। রোগীকে দ্রুত আরোগ্য করার জন্য সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করা একান্ত জরুরি। সঠিক ঔষধ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে PQRS ও Keynote লক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। PQRS ও Keynote লক্ষণের মাধ্যমে দ্রুত রোগীর জন্য সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা যায়। যেমন - Capsicum annuum এর রোগী কাশি দিলে শরীরের দূরবর্তী স্থানে ব্যথা হয় অর্থাৎ রোগী যদি বলে কাশি দিলে আমার পায়ে ব্যথা হয়, এটি একটি PQRS লক্ষণ। যা অন্য কোন ঔষধে নেই। সুতরাং সঠিক ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে PQRS লক্ষণের গুরুত্ব অনেক বেশি। তার মানে এই নয় যে আমরা শুধুমাত্র একটি PQRS ও Keynote লক্ষণের উপর ভিত্তি করে রোগীকে ঔষধ দিব। রোগীর অন্যান্য লক্ষণগুলো ঐ ঔষধকে নির্দেশ করে কিনা তা দেখে নিতে হবে। তাহলেই আমরা রোগীকে দ্রুত ও স্বল্প সময়ের মধ্যে আরোগ্য করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমি এই বইটিকে প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে সাজিয়েছি। কারণ আমি যখন মেটেরিয়া মেডিকা থেকে কোন ঔষধ পড়তাম তখন দেখতাম পূর্বের ঔষধটি ভুলে গেছি বা একটি ঔষধ অন্য ঔষধের সাথে মিলেয়ে ফেলছি। আবার কোন ঔষধের মূল কথাগুলো মনে রাখাও আমার জন্য অসম্ভব। তাই সহজে মনে রাখার জন্য আমি ঔষধের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিভন্ন বই এবং Synthesis Repertory থেকে সংগ্রহ করে প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে সাজাই যা মনে রাখা আমার জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। তখন আমার কাছে মনে হল, এটি বই আকারে বের করলে সবার জন্য উপকার হবে। এই বইটি লেখার মূল উদ্দেশ্য হল হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ও শিক্ষার্থিরা যাতে হোমিওপ্যাথির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সহজেই মনে রাখতে পারে এবং প্রাক্টিসে প্রয়োগ করতে পারে। যদি এই বইটির মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ও শিক্ষার্থিরা সামান্যতম উপকৃত হন তাহলে আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো। আমি এই বইয়ের যাবতীয় তথ্যগুলো সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি, তারপরেও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। এই বইয়ের যে কোন ভুলত্রুটি বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ অনুগ্রহ করে আমার নজরে আনলে অবশ্যই তা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করা হবে। এই বইয়ের যে কোন গঠনমূলক সমালোচনা, উপদেশ ও পরামর্শ একান্তভাবে কাম্য। পরিশেষে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ও শিক্ষার্থীদের মাঝে এই বইটি আনতে পারার জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।