ডা. হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডিসিনের ৫ম সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, রোগীকে আরোগ্য করার জন্য চিকিত্সককে একুইট রোগের সবচেয়ে সম্ভাব্য উত্তেজক কারণের বিবরণ এবং ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে সমগ্র ইতিহাস ও বিস্তৃত বিবরণ জানিয়া বিশেষ বিশেষ লক্ষণসমূহের প্রতি লক্ষ্য করতে হবে, যাতে আমরা এর মৌলিক কারণ আবিষ্কার করতে সক্ষম হই, যা সাধারণত একটি দীর্ঘস্থায়ী মায়াজমের কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য রোগীর শারীরিক গঠন, মানসিক ও শারীরিক অবস্থা, বুদ্ধিবৃত্তি, পেশা, জীবনযাপনের ধরণ, অভ্যাস, সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থা, বয়স, যৌন প্রবৃত্তি, ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। এই সুত্র থেকে জানা গেল যে, রোগীর জন্য একটি সঠিক ঔষধ নির্বাচন করার জন্য রোগীর সর্বাঙ্গিন লক্ষণের সাথে রোগীর যৌন জীবন সম্পর্কেও বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে। এ ছাড়াও ডা. হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডিসিনের ৯৪নং সূত্রের টিকায় উল্লেখ করেছেন যে, মহিলাদের ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা, বন্ধ্যাত্ব, যৌন আকাঙ্ক্ষা, গর্ভপাত, স্তন্যপান এবং মাসিক স্রাবের অবস্থার দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে। সুতরাং উপরের দুইটি সূত্র থেকে জানা গেলো যে, রোগীর জন্য সঠিক ঔষধ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যেমন যৌন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ভাবে যৌন দুর্বলতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ বিভিন্ন কারণে যৌন দুর্বলতায় বা যৌন উম্মাদনায় ভুগে। এর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত হস্তমৈথুন, অতিরিক্ত যৌনক্রিয়া, অবৈধ মেলামেশা, যৌনবাহিরোগ, অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ, যৌন ইচ্ছা চেপে রাখা, মানসিক বা শারীরিক সমস্যা, ইত্যাদির কারণে যৌন দুর্বলতায় বা যৌন উম্মাদনায় ভুগে। এর ফলে দাম্পত্য জীবনে লিঙ্গ সঠিকভাবে উত্থিত না হওয়া বা একেবারেই উত্থিত না হওয়া, উত্থান ছাড়াই বা দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হয়ে শরীর ভেঙ্গে যাওয়া, মল বা প্রস্রাবের সাথে বীর্য বা প্রোস্টেটিক তরল নির্গত হওয়া, মহিলাদের মধ্যে সহবাসের প্রতি অনিহা বা অত্যধিক কামোম্মাদনা দেখা দেওয়া, ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হন। এছাড়াও শারীরিক বা মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্ত রোগের চিকিৎসা করার জন্য অবশ্যই রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং যৌন লক্ষণগুলো বিবেচনা করতে হবে। এই বইটি লেখার কারন অধিকাংশ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার যৌন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অপচিকিৎসার দ্বারস্থ হন। কারন তারা যৌন রোগ চিকিৎসার সঠিক কোনো গাইড লাইন পাচ্ছেন না। যার কারণে ডাক্তাররা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছন এবং রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন। এ ছাড়াও এমন অনেক রোগী আছেন যারা বিভিন্ন ধরণের যৌন উত্তেজক ঔষধ খেয়ে লিভার, কিডনি নষ্ট করে ফেলছেন এবং এ সকল যৌন উত্তেজক ঔষধ খেয়ে স্থায়ী পুরুষত্বহীনতায় পতিত হচ্ছেন। তাই রোগীকে স্থায়ী ভাবে আরোগ্য করার জন্য আমাদেরকে মেটেরিয়া মেডিকাতে উল্লেখিত ঔষধের মধ্যে কোন কোন ঔষধ যৌন দুর্বলতায় ভাল কাজ করে সেগুলোর সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতে হবে। আমি এই বইটিতে যৌন দুর্বলতায় বেশি ব্যবহিত ঔষধগুলোর যৌন বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো বিভিন্ন মেটেরিয়া মেডিকা থেকে একত্রিত করেছি। এর সহিত রেপার্টরিতে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ রুব্রিক এবং বিভিন্ন ডাক্তারের যৌন দুর্বলতার সফল কেস, তাদের যৌন বিষয়ের ক্লিনিক্যাল টিপসগুলো উল্লেখ করেছি। উল্লেখ্য যে, এই বইটির মধ্যে কোনো ঔষধের কোনো ধরণের জেনারেল সিমটম (শারীরিক ও মানসিক) উল্লেখ করা হয়নি, শুধুমাত্র যৌন বিষয়ের যে সকল লক্ষণ রয়েছে সেগুলোই উল্লেখ করা হয়েছে। তাই রোগীর জন্য সঠিক ঔষধ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে রোগীর যৌন লক্ষণগুলোর সহিত শারীরিক ও মানসিক অন্যান্য লক্ষণগুলোও অবশ্যই মিলিয়ে নিতে হবে। তাহলেই রোগীকে আদর্শ আরোগ্য করা সম্ভব হবে। আমি এই বইটির যাবতীয় তথ্যগুলো সঠিকভাবে লিপিবন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, তারপরেও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির জন্য আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল কারো দৃষ্টিগোচর হয় তাহলে অনুগ্রহ করে আমার নজরে আনলে অবশ্যই তা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করা হবে, ইনশাআল্লাহ্। এই বইটির যে কোনো গঠনমূলক সমালোচনা, উপদেশ ও পরামর্শ একান্তভাবে কাম্য। পরিশেষে এই বইটির মাধ্যমে যদি কোনো হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার এবং শিক্ষার্থি সামান্যতম উপকৃত হন তাহলে আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো। আল্লাহ্র দরবারে লক্ষকোটি শুকরিয়া জানাই, তার দয়া ও অনুগ্রহে আমি এই বইটি শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। ডা. মাহফুজুর রহমান