হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরম প্রিয় দৌহিত্র । পার্থিব জীবনের সুবাসিত প্রসুন । হযরত আলীর স্নেহপুত্তলি। মা ফাতেমার নাড়ি ছেঁড়া ধন । জান্নাতি যুবকদের মহানায়ক। সত্য ও ন্যায়ের পথের নিঃশঙ্ক বীর। নবীজি বলেন : যে হাসান ও হোসাইনকে ভালোবাসলো সে আমাকেই ভালবাসল আর যে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করলো সে আমার সাথেই শত্রুতা পোষণ করলো ( নাসাঈ -8168) অকুতোভয় সাহস নিয়ে যিনি লড়ে গেছেন বাতিলের বিরুদ্ধে । মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পাপিষ্ট ঘাতকের সামনে নতি স্বীকার করেননি । মুষ্টিমেয় কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কয়েক হাজারের বিশাল বাহিনীর উপর। আপন বাহিনীর সংখ্যা স্বল্পতা ও সরঞ্জামহীনতা তার অটলতায় চিড় ধরাতে পারেনি একটুও । ইসলামী খেলাফতের মত মহা গুরু দায়িত্ব কোন অপাত্রে অর্পিত হবে এবং এর খেসারত দিতে হবে পুরো উম্মাহকে- মুহূর্তের জন্য এটা মেনে নিতে পারেননি তিনি। দ্বীনের জন্য, সত্যের জন্য, উম্মাহর জন্য বীরদর্পে লড়তে লড়তে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ইয়াজিদের মদদপুষ্ট উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের নির্দেশে গঠিত শিমার ও ওমর বিন সাদের নেতৃত্বে পরিচালিত বাহিনী তার উপরে সংঘটিত করে নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ড। ১০ই মহররম ৬১ হিজরী মোতাবেক ১০ই অক্টোবর ৬৮০ হিজিরিতে মর্মঘাতি এই ঘটনার সাক্ষী হয় ইতিহাস। কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে তিনি শামিল হয়ে যান জান্নাতের সবুজ পাখিদের দলে । রচিত হয় ইতিহাসের চূড়ান্ত বিভীষিকাময় মর্মন্তুদ , দোষাবহ, কলঙ্কজনক অধ্যায়। কুফা বাসীদের বিশ্বাসঘাতকতায় নিষ্ঠুর ভাবে প্রাণ দিতে হয় সে সময়ের উম্মাহর শ্রেষ্ঠ ও বরিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হযরত হুসাইন রাজিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে। সেই ক্লেশাবহ বিষাদময় ইতিহাস আজও উম্মাহর হৃদয়কে ভেঙে চুরচুর করে দেয়। হৃদয়ের গভীরে তৈরি করে নিরন্তন দহনের বিভীষিকা। "কারবালা" শব্দটি শুনতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে হযরত হুসাইন ও তার পরিবারের রক্তে রঞ্জিত প্রান্তরের চিত্র। পিপাসায় ছটফট করতে থাকা শিশুদের আর্তস্বর। একদল কপট ও বিশ্বাসঘাতকের হিংস্রতার বীভৎস্ব রূপ। কি হয়েছিল সেদিন কারবালার প্রান্তরে? হুসাইন কেন কুফায় রওনা হন? ক্ষুদ্র একটি কাফেলা নিয়ে কেনই বা তিনি বের হয়েছেন ?তার এই অভিযাত্রার ব্যাপারে কি ছিল মহান সাহাবীদের অবস্থান? সেদিন কি ভূমিকা পালন করেছিল কুফা বাসী? ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ কে? হোসাইনকে হত্যার নেশা তার মাথায় কেন চেপে বসে? হুসাইন হত্যার সাথে জড়িতদের শেষ পরিণতি কি হয়েছিল? ইয়াজিদের ভাগ্যেই বা কি জুটে ছিল শেষমেষ? সে কি কাফের না ফাসেক? হুসাইনের শাহাদাতের জন্য কারা দায়ী? এই হত্যাকাণ্ডের কারণে শিয়া মতবাদ কোন দিকে মোড় নেয়? তাদের আকিদা-বিশ্বাসে কি কি স্খলন তৈরি হয়? হোসাইন - এর পরিবারের সাথে কিরূপ আচরণ করে ইয়াজিদ? কোথায় দাফন করা হয় তার কর্তিত মাথা? তার জীবনেতে আমাদের জন্য কি শিক্ষা ও নসিহা রয়েছে? এ সকল প্রশ্নের উত্তরে দিতেই রচিত হয়েছে বক্ষমান গ্রন্থটি । শক্তিমান ইতিহাসবিদ, লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক ডক্টর আলী মোঃ সাল্লাবী, ক্ষুরধার লেখনী, বিস্তৃত ও পরিব্যপ্ত গবেষণা আর ইতিহাসের নিগুঢ় ও নিপাট সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে যিনি সুবিদিত ও অনন্য। আপন কলমের নিপুন আঁচড়ে একে একে তুলে ধরেছেন অশ্রুপ্লাবিত পুরো ইতিহাস। শক্তিশালী প্রমাণাদি অবিমিশ্র তথ্য ও নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতির মাধ্যমে বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন সেই ইতিহাসের অদ্যপান্ত। কারবালার নির্মম ইতিহাসের অদ্যপান্ত জানতে ও ইতিহাসে এর গভীর প্রভাব সম্পর্কে অবগত হতে অধ্যয়ন করুন " কারবালার যুদ্ধ" বইটি ।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০