ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা মাঝেমধ্যে নিজের দিকে তাকালে আমার মনে হয় মাস্তানি জিনিসটা মেয়েদের যৌবনের মতো হয়তো এক অর্থে কিন্তু আরেক অর্থে অসুখের মতো। ভয়ংকর অসুখের মতো। রক্তের অসুখ। লিউকোমিয়া। ব্লাড ক্যান্সার। রক্তের মধ্যে মাস্তানি জিনিসটা একবার ঢুকে গেলে নিস্তারের আর কোনও উপায় নেই। নিস্তার পেতে হলে শরীর থেকে পুরো রক্ত বের করে দিতে হবে। মৃত্যু। মৃত্যুই হচ্ছে মাস্তানির শেষ পরিণতি। আর সেই মুত্যুও স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। অপমৃত্যু। অপঘাতে মৃত্যু। নিজের দিকে তাকিয়ে খুব একা থাকলে মাঝে মধ্যে আমি সেই মৃত্যুর কথা ভাবি। মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকি। কবে আসবে মৃত্যু? কীভাবে আসবে মৃত্যু? গণপিটুনিতে মরে যাব! নাকি গুলি খেয়ে। ছোরার আঘাতে, নাকি ককটেল খেয়ে টুকরো টুকরো ছিটকে পড়বে শরীরের বিভিন্ন অংশ! এক জায়গায় একটা হাত, একটা চোখ কিংবা একটা পা। আরেক জায়গায় এই তিনটি জিনিস ছাড়া শরীরের বাকি অংশ। কীভাবে আসবে আমার মৃত্যু! আজ দুপুরে আমাদের ফ্ল্যাটে, আমাদের ড্রয়িংরুমের লম্বা সোফাটায় শুয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিলাম। কেন যে! কখন কোন মুহূর্তে যে মানুষের কোন কথা মনে পড়ে! কেন যে মনে পড়ে, কেউ তা জানে না। আমিও জানি না! কেন আমার মৃত্যুর কথা মনে পড়ল। কীভাবে আসবে মৃত্যু সেই কথা সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে অনেক্ষণ ধরে কেন ভাবলাম আমি!
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।