ষাট দশকের প্রথম দিকের কথা, ঢাকা বেতারকেন্দ্রই সবচাইতে শক্তিশালী গণমাধ্যম। টেলিভিশন মাধ্যম একেবারেই নতুন অবস্থায়। শক্তিশালী মাধ্যম ছিল বলে শিল্পীদের কণ্ঠের সাথে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ঢাকা বেতার কেন্দ্র। তাছাড়া তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। সেসময় বেতার কেন্দ্রে বেশিরভাগ গান প্রচার হতো ভারতের শিল্পীদের গাওয়া বাংলা গান। সাথে প্রচার হতো পাকিস্তানের গজল ও উর্দু গান। ঢাকার শিল্পীদের মধ্যে ফেরদৌসী আপার গানই বেশি শোনা যেত। কারণ ফেরদৌসী আপা তখন থেকে সব ধরনের গান গাইতে পারতেন। সংগীত সাধনায় ফেরদৌসী আপা আত্মনিয়োগ করেছিলেন অন্তর থেকে। তাই দক্ষ শিল্পী হিসেবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অথবা দেশ-বিদেশের শ্রোতা-দর্শকদের কাছে নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে অসুবিধা হয় নি। কেবল আধুনিক গান, লোকসংগীত, নজরুলসংগীতেই নয় উচ্চাঙ্গসংগীতেও ফেরদৌসী আপার দক্ষতা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভারত উপমহাদেশের জনগণকে। এই প্রতিভাবান শিল্পী গজল ও উর্দু গান পাকিস্তানের ছায়াছবিতে প্লেব্যাক করে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। '৬৫ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের সময় থেকেই ভারতের শিল্পীদের গান প্রচার বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান সরকার।
শহীদ পরিবারের সন্তান লেখক রফিকুল ইসলাম । 1966 সনের 1 ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । শৈশবে 1971 সনের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর একমাত্র চাচা শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আরজ আলী বীরোচিতভাবে শহীদ হন, যিনি ছিলেন নিজ পরিবার এবং এলাকাবাসীর স্বপ্ন । অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হতে দেখেন তাদেঁর বাড়িঘর। তাঁর পারিবারিক এই ট্রাজেডি/বিয়োগ-ব্যাথা নিয়ে রচিত হতে দেখেন বাউলগান ও গীতিকবিতা। তখন থেকেই উপলব্ধি করতে শেখেন- মুক্তিযুদ্ধে খুবই মর্মন্তুদ ও বীরোচিত এক ঘটনা ঘটে গেছে তাদেঁর পরিবারে, যার উপলব্ধি ও মূল্যায়ন রয়েছে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সর্বসাধারণের মধ্যে । তখন থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন- বড় হয়ে তিনিও লিখবেন মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ উপাখ্যান । যার ফলশ্রুতিতেই লেখকের এময়ের সৃষ্টি সাড়াজাগানো মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস 'একাত্তরের বিষাদ সিন্ধু'। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন- ত্রিশ লক্ষ শহীদ পরিবারে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে ট্র্যাজিক সাহিত্যের উপাদান, আর দেশপ্রেমিক প্রতিটি শহীদ এ জাতির শ্রেষ্ঠ বীর । এ উপন্যাসটি লেখকের প্রথম গ্রন্থ হলেও লেখালেখির জগতে তিনি নতুন নন। কৈশোর কাল থেকেই তিনি ছড়া ও কবিতা লিখতেন দেশ-বিদেশের রেডিওর সাহিত্য আসরে, শিশু পত্রিকায়, সাপ্তাহিক বিচিত্রায় এবং লিটল ম্যাগাজিনে। অধ্যাপনা পেশায় থেকেও তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ ও বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজ ভাবনা ও ভ্রমণ বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবত কলাম/নিবন্ধ লেখক । গদ্য সাহিত্যে তাঁর লেখার সাবলীলতা ও স্বকীয় ছন্দময়তা পাঠককে মোহাবিষ্ঠ করে তুলে । এটি তাঁর লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও আকর্ষণ। যা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস 'একাত্তরের বিষাদ সিন্ধু'র শুরু থেকে শেষ পর্যন্তও । আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস- এ লেখকের লেখা সর্বদাই পাঠকদের কাছে সমাদৃত হবে ।