আমাদের কথা স্মরণে মননে কাজী নজরুল ইসলাম প্রাণপ্রিয় বন্ধুরা, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো তোমরা? আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছো এবং লেখাপড়ায় নিয়মিত মনোযোগ দিচ্ছো। ভাদ্র-আশ্বিন- এই দুই মাস নিয়ে শরৎকাল। শরৎ মানেই তো জানো শিউলি ফোটার দিন। ভোরের শিশিরে সিক্ত ঘাস, লতাপাতা। ধানের শীষে বিন্দু বিন্দু শিশির যেন একেকটি মুক্তোর দানা! শুধু শিউলি নয়, শরৎকালে আরও অনেক ফুল ফোটে যা আমাদের হৃদয়-মনে ভালো লাগার পরশ ছুঁয়ে যায়। এই আগস্টেই আমাদের জাগরণের কবি, প্রাণের কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী। তোমরা মনে হয় সবাই এ ব্যাপারে সচেতন আছো। কবি নজরুল ইসলাম এমন একজন সর্বকুলব্যাপী কবি, যিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন অজস্র কালজয়ী লেখা- কবিতা, গান, শিশু-কিশোরদের কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস প্রভৃতি। এছাড়াও তাঁর যোগ্যতা ছিল বহুমাত্রিক। তিনি ছোটোদের খুব ভালোবাসতেন। খুব আদর করতেন। ছোটোদের স্বপ্ন জাগানিয়া কবি ছিলেন তিনি। যেমন তিনি বলছেন- ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি।সূয্যিমামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে, ‘হয়নি সকাল, ঘুমো এখন’- মা বলবেন রেগে।’ কবির এই ইচ্ছা কিন্তু শুধুমাত্র সকাল বেলার পাখি হওয়া নয়, একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যাবে এর ভেতরে রয়েছে অনেক গূঢ় তাৎপর্য। সেটি হলো এই যে, সবাই যদি ঐ পাখির মতো সবার আগে জাগতে পারে এবং জাতিকে জাগানোর চেষ্টা করে তাহলে গোটা জাতিই জেগে উঠবে। হ্যাঁ বন্ধুরা, আমরা যেন কবির সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি। সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।আল্লাহ পাক আমাদের তৌফিক দান করুন। আজ এ পর্যন্তই! আল্লাহ হাফিজ।
মোশাররফ হোসেন খান। আশির দশক থেকে কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, জীবনমুখী গদ্যসাহিত্যসহ শিশু-কিশোরদের সাহসী স্বপ্নবোনার নানা অনুষঙ্গ নিয়ে নিরলসভাবে লেখালেখি করছেন এই কীর্তিমান। ১৯৫৭ সালের ২৪ আগস্ট যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ডা. এম এ ওয়াজেদ খান এবং বেগম কুলসুম ওয়াজেদ তাঁর গর্বিত বাবা-মা। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত 'হৃদয় দিয়ে আগুন' কাব্যগ্রন্থটি মোশাররফ হোসেন খানকে কবিতার মাঠে করিয়ে দেয় সাহসের সাথে। অতঃপর ‘নেচে ওঠা সমুদ্র', 'আরাধ্য অরণ্যে', ‘বিরল বাতাসের টানে' কাব্যগ্রন্থগুলো তাঁকে ঝড়ের মাঝে শক্তমাঝির ভূমিকায় পরিচিত করে। তবে ১৯৯৫ সালে কবিতার মাঠে হৈচৈ ফেলে দেয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'পাথরে পারদ জ্বলে'। ‘ক্রীতদাসের চোখ', 'নতুনের কবিতা', 'বৃষ্টি ছুঁয়েছে মনের মৃত্তিকা’, ‘দাহন বেলায়’, ‘কবিতাসমগ্র', 'কবিতাসমগ্র-২’, ‘সবুজ পৃথিবীর কম্পন’, ‘পিতার পাঠশালা', 'স্বপ্নের সানুদেশ’ তাঁকে কাব্যভুবনে শক্তিশালী অবস্থানে অধিষ্ঠিত করে। গদ্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁকে খ্যাতির দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে তাঁর 'সাহসী মানুষের গল্প'। ‘রহস্যের চাদর’, ‘অবাক সেনাপতি', 'দূর সাগরের ডাক', ‘কিশোর কমান্ডার’, ‘ছড়ির তরবারি', কিশোর গল্প 'জীবন জাগার গল্প’, ‘সুবাসিত শীতল হাওয়া’, ‘আগুন নদীতে সাঁতার’, ‘অবাক করা আলোর পরশ', ‘ছোটদের বিশ্বনবী'সহ নানা জীবনীগ্রন্থ তাঁকে শিশু-কিশোর সাহিত্যে করে তুলেছে খ্যাতিমান। গল্পগ্রন্থ 'প্রচ্ছন্ন মানবী', 'সময় ও সাম্পান, ডুবসাঁতার এবং কিশোর উপন্যাস ‘বিপ্লবের ঘোড়া', 'সাগর ভাঙার দিন', 'ঝিমায় যখন ঝিকরগাছা’, ‘কিশোর উপন্যাসসমগ্র', 'স্বপ্নের ঠিকানা' এবং ‘বাঁকড়া বিলের বালিহাঁস' মোশাররফ হোসেন খানকে কথাসাহিত্যে এনে দিয়েছে বিশেষ জনপ্রিয়তা। ইতোমধ্যে ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফারসি, হিন্দি, গুজরাটি, অহমিয়া এবং রুশ ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে তাঁর কবিতা-গল্প প্রকাশিত হচ্ছে। পুরস্কার : গোলাম মোহাম্মদ সম্মাননা-২০১৯, সিএনসি ফররুখ পুরস্কার-২০১৬, পরিচয় সাহিত্য পদক। কবি স্ত্রী বেবী মোশাররফ, পুত্র নাহিদ জিবরান, কন্যা নাওশিন মুশতারী ও নাওরিন মুশতারীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন দীর্ঘদিন থেকে।