“বাংলাদেশের ছোটগল্পের শিল্পরূপ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ সময়-সমাজ ও রাষ্ট্রের বৈচিত্র্যময় রূপান্তরের পটভূমিকায় বাংলাদেশের ছােটগল্প প্রাতিস্বিকতা অর্জন করে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ। থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত এবং স্বাধীনতা-উত্তর প্রায় চার দশকে এদেশের ছােটগল্প নিজস্ব ভূমিতে স্থিত হয় । সময় সার্বভৌম। নিরাসক্ত সময় অবলােকন করে বেদনা-বিহ্বল মানুষের জীবনগাথা। ভারতবিভাজন, পাকিস্তানসৃষ্টি, উদ্বাস্তু মানুষের বিচূর্ণ জীবন, সাম্প্রদায়িকতার হিংস্র আবহ এবং অনিকেত নরনারীর বেদনা-অশ্রু আমাদের ছােটগল্পের প্রাসঙ্গিক বিষয় হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে অনিবার্যভাবে যুক্ত হয় আবহমান গ্রামজীবন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এবং পুরাে ষাটের দশকে এই ভূখণ্ডের মানুষ ব্যাপৃত হয় তার আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সংগ্রামে। একইভাবে স্বাধীনতা-উত্তর স্বদেশে মানুষের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণাকে কাছ থেকে দেখেছেন। আমাদের। গল্পকাররা! মধ্যসত্তরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় সামরিক অনুপ্রবেশ আমাদের ঠেলে দেয় কৃষ্ণবিবরে। সেই বিবরে ছিল অনিশ্চিত অমা। ফলে নাগরিক জটিলতায় বিমূঢ় মধ্যবিত্ত তার মনোগভীরে আবিষ্কার করে এক অমােঘ ফাটল। এতােসব ভঙ্গুরতা এড়িয়ে আশি-নব্বইয়ের নিরীক্ষাপ্রিয় লেখককুল ভিন্ন ডাঙার সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন বিশ্বগল্পতরু থেকে তারা নিয়ে আসেন প্রাণবীজ, বাস্তব আর যাদুবাস্তরের মায়াবী বুননে আটপৌরে জীবনই তাঁদের গল্পে পায় বিপুল বর্ণাঢ্যতা। ‘বাংলাদেশের ছােটগল্পের শিল্পরূপ' শীর্ষক অভিসন্দর্ভে ছােটগল্পের শৈল্পিক কাঠামাে ও প্রকরণজিজ্ঞাসাই অন্বিষ্ট। কিন্তু গল্পের ভ্রণ জীবনের যে-জতুগৃহে বেড়ে ওঠে সেই জীবনকেও প্রাপ্য মূল্যে উপস্থাপন করা হয়েছে এ গ্রন্থে।
চঞ্চল কুমার বােস। জন্মস্থান কুড়িগ্রাম, ৭ এপ্রিল ১৯৬৬। ধরলার তীরে কেটেছে শৈশব-কৈশাের। আদিনিবাস বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স (১৯৮৬) ও মাস্টার্স (১৯৮৮)। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন (২০০৩), বিষয় বাংলাদেশের ছােটগল্পের শিল্পরূপ (১৯৪৭-১৯৯৬)। অন্তর্মুখী, বেড়াতে পছন্দ করেন অরণ্যে-টিলায়-গ্রামে-মফস্বলে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রফেসর পদে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ বাংলাদেশের ছােটগল্পের শিল্পরূপ (বাংলা একাডেমি, ২০০৯) বাংলা কথাসাহিত্য এবং অন্যান্য (শব্দকোষ, ২০১১) শওকত আলীর কথাসাহিত্য : জীবন ও সময়ের বিনির্মাণ (বিশ্বসাহিত্য ভবন, বইমেলা ২০১৫)