‘বৈশাখ এল ছুটে রোদমাখা হাসিতে বটগাছ মাথা নাড়ে রাখালের বাঁশিতে। ঝিরিঝিরি মৃদু হাওয়া পাতাগুলো দুলছে বাবুইরা খুশি মনে তালগাছে ঝুলছে। আজ যেন বাঙালিরা উল্লাসে নাচছে পান্তা-ইলিশ ভাজা মজা করে খাচ্ছে। কেউ ছোটে রমনায় লাল পেড়ে শাড়িতে পাঞ্জাবি গায়ে কেউ চড়ে আসে গাড়িতে।’ ‘বৈশাখী ভাবনা’ শিরোনামের এই ছড়াটি লিখেছেন ছড়াকার জুবাইর জসীম। শিশু-কিশোরদের প্রিয় একজন ছড়াকার জুবাইর জসীম। এ ছড়াটি ‘ইলিক ঝিলিক রোদের খেলা’ বইয়ের প্রথম ছড়া। বইটির এত সুন্দর একটি নামের জন্য প্রথমে প্রশংসা করে নেওয়া উচিত। চমৎকার যেমন বইটির নাম তেমনি বইটির মুদ্রণও দৃষ্টিনন্দন। ৩২ পৃষ্ঠার এই ছড়ার বইটিতে ২০টি ছড়া সূচিবদ্ধ করা হয়েছে। বিকেলের রূপকথা, বর্ষা হাসে তালপুকুরে, সবুজের হাসি, মা যে আমার সবুজ সাথি, মুক্ত সোনার দেশ, বর্ণমালার গান, জিনজিরা দ্বীপ, চতুর্দিকে জয়ের ধ্বনি, শোকের ছায়া, বন্ধু রাসেলসহ আরো অনেক ছড়া রয়েছে বইটিতে। স্বপ্ন কল্পনা আর প্রকৃতি ও দেশেপ্রেমের অমলিন আয়োজন রয়েছে এই ছড়াগুলোর ভাঁজে ভাঁজে। ‘বন্ধু রাসেল’ ছড়াটি এ বইয়ের একটি বিশেষ ছড়া বলা যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারে অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তখন সেই হত্যাকাÐের শিকার হয় বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেল। শেখ রাসেলের সেই হত্যাকাÐ খুবই বেদনাদায়ক। আমাদের চারপাশে যত ফুটফুটে শিশু-কিশোর দেখি এমনই দেখতে ছিল শেখ রাসেল। ‘রাসেল বুঝি হারিয়ে গেছে তেপান্তরের মাঠে কল্পলোকে কেমন করে সময় যে তার কাটে। শোকের তোড়ে ঢেউরা কাঁদে মধুমতির তীরে কষ্টগুলো জমাট বাঁধে কালচে মেঘের ভিড়ে।’ বইটির ছড়াগুলোতে নানা রকম ছন্দের ব্যবহার করেছেন ছড়াকার। এসব ব্যবহার যে আরোপিত তা বলা যাবে না। এক একটি বিষয়কে ছড়া করে তুলতে যখন যে ছন্দের প্রয়োজন হয়েছে তিনি তাই ব্যবহার করেছেন নিপুণভাবে। বর্তমান সময়ের ছড়ার যে বহুমুখী ব্যবহার সে বিষয়েও সচেতন ছড়াকার। তিনি কেবল শিশু-কিশোরদের কথা মাথায় রেখেই ছড়াগুলো নির্বাচন করেছেন। ছড়া পাঠ করতে গেলে যদি পাঠকের ভেতর কল্পনার রাজ্য তৈরি না হয় তবে সে ছড়া শুধু শব্দের জট মনে হবে। দেশ, মাটি, সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, রূপময় প্রকৃতিসহ নানামুখী ছড়ার একটি অনবদ্য ছড়ার বই ‘ইলিক ঝিলিক রোদের খেলা’।