ধরাল মোড়ে সোনার ভোরে/জাগল রূপার চর বালুর মাঝে ঝিনুকরা যে/বাঁধল কেবল ঘর। নেই গাছালি শুধুই বালি/নেই প্রাণী আর কেউ মাঝ নদীতে চাঁদনী রাতে/চার পাশে তার ঢেউ। ছড়াকার ইসমাত মির্যার ‘সোনার ভোরে রূপার চরে’ বইটির প্রথম ছড়া ‘রূপার চর’ শিরোনামের ছড়া এটি। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্যা নদী এঁকেবেঁকে গেছে দেশজুড়ে। এই নদীগুলোতে অনেক সময় চর পড়ে। চর মানে নদীর স্রোতে ভেসে আসা মাটি নদীর যেকোনো একটা অংশে এসে জমা হতে হতে সেই জায়গাটা ভরাট হয়ে ওঠে। কিন্তু রূপার চর তো এক কাল্পনিক চর। এ চরের শোভা-সৌন্দর্য আর সিগ্ধতা অসাধারণ। ১৬ পৃষ্ঠার এ বইটিতে রূপার চর ছাড়াও রয়েছে আরে বেশ কিছু ছড়া। এগুলো হলো―কদিন পরে, গ্রামটি গড়ে, ফসল মাঠে, শিশু-কিশোর, বকটি ধরে, সন্ধ্যা বেলা, হৃদয় ভাসায়, খেলনা ওদের, বাসায় গিয়ে, বৈশাখী ঝড়, নতুন ঘর এবং বন্যা আসে। নাই হতে ভোর শিশু-কিশোর/নদীর পাড়ে যায় ঢেউ ওঠে জোর ঘূর্ণির ঘোর/নির্ভয়ে সাঁতরায়! মজাও ভারী পদ্মা পাড়ি/যখন তখন রোজ ওদের বাড়ীর পুরুষ-নারী/কে রাখে কার খোঁজ? শিশু-কিশোর ছড়ায় এমন একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ছড়াকার ইসমাত মির্যা। গ্রামীণ জীবন কতই না আনন্দের। কোনো বাধা-নিষেধ না মেনেই দুরন্তপানা করা। পদ্মার উত্তাল জলে নেমে সাঁতার কাটা। কেউ কারো খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করে না। গুলতি ছুড়ে বকটি ধরে/কিম্বা তোলে শাক হাট বাজারে বিক্রি করে/পয়সা যতই পাক― দিব্যি চলে, ক্ষিদেয় পেলে/খাবার কিনে খায় সন্ধ্যা হলে সদলবলে/বাসায় ফিরে যায়! অপরূপ গ্রামবাংলার এক চিরায়ত দৃশ্য যেন এই ছড়াগুলোর মধ্যে ফুটে উঠেছে। শহরে যারা থাকে তারা হয়তো বুঝবে না এই জীবনের আনন্দ। কিন্তু এই ছড়াগুলো পড়লে সেই স্বাদ পাওয়া যাবে। গ্রামের শিশু-কিশোরদের জীবনের চালচিত্র, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার এক মহাসমারোহ এ ছড়ার বইটি। রঙিন ছবি আর ছড়ায় একাকার হয়ে আছে বইটি। বইটি হাতে নিলেই মনে হবে যেন কোন স্বপ্নের গ্রামে পৌঁছে গেছি আমরা সব বাধা-বিপত্তি আর কোলাহল ভুলে।