সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ। যা চিরকাল বৃহৎবঙ্গের সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে অভিন্নসূত্রে গাঁথা থাকে। কিন্তু ঔপনিবেশিক সরকার ১৮৭৪ সালে সিলেটকে আসাম প্রদেশে ঠেলে দেয়। ‘বঙ্গ বিচ্ছিন্নতা’র কারণে সিলেটের সমাজ-সাহিত্য-শিক্ষা বিকাশে অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। যখন সিলেটীদের মনোজগতে সে ক্ষোভের যন্ত্রণা গদগদে করছে-- তখন ১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ ‘শ্রীভূমি’ সফর করেন। তাঁর আলোক ছড়ানোর দীপ্ত প্রতিভায় জ্বলে ওঠে উত্তর-পুর্বঞ্চলের জনপদ। ফলে শিক্ষা-সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি বিনির্মাণে নতুনত্বের ছোঁয়া লাগে। এবং ‘অবলা’রা জেগে ওঠার পরিবেশ পায়। এই জটিল বাঁক-বদলগুলো গবেষক দীপংকর মোহান্ত তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সিলেটে হিন্দু মুসলমানের সহজাত সম্পর্ক সুদীর্ঘকালের। রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে তা আরো মধুময় হয়ে ওঠে-- তার বয়ানও তিনি দিয়েছেন। তেতাল্লিশ থেকে সত্তর সাল পর্যন্ত রবীন্দ্র বর্জনের যে পায়তারা চলেছিল-- তার বিরুদ্ধে ছিল সিলেটের মুসলিম সমাজ। এই সমাজ কী করে রবীন্দ্র রক্ষায় নিমগ্ন হয়েছিল-- তার নতুন তথ্য কালের ঝরাপাতা থেকে উদ্ধার করেছেন তিনি। তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে রবীন্দ্র চর্চার বহুমাত্রিক দিক উন্মোচিত হয়েছে।