আমার কথাটি ফুরালো নটে গাছটি মুড়ালো কেনরে নটে মুড়ালি? ছাগলে ক্যান খায় কেনরে ছাগল খাস? আকাশ কেন জল দেয় না ক্যানরে আকাশ জল দেস না ব্যাঙ কেন ডাকে না ক্যানরে ব্যাঙ ডাকস না সাপ ক্যান খায় ক্যানরে সাপ খাস? খাবার ধন খাব না কুটুস করে কামড় দিয়ে গর্তের ভিতর যাব না। মাঝেমধ্যে বেণু এবং বেণুর সমবয়সীদের আনন্দদানের জন্য গ্রাম্য লোকছাড়া বলত। এটি তেমনই একটি ছড়া, যা বেণুর স্মৃতিতে এখনো গেঁথে আছে। ‘ছায়াবীথি তলে’ নঈম নজরুলের অসাধারণ একটি দীর্ঘ গল্পের বই। আজকের যারা শিশু-কিশোর তারা বইটি পড়লে জানতে পড়বে আগের দিনের শিশু-কিশোরদের জীবন কেমন ছিল। কী করত, কোথায় ঘুরত, কী নিয়ে তারা খেলা করত। আরো কত কী। গল্পকার নঈম নজরুল বেণু চরিত্রটির মধ্য দিয়ে আবহমান গ্রামবাংলার মনোমুগ্ধকর স্মৃতিগুলো তুলে ধরেছেন গল্পে গল্পে। এই তো সুন্দর বর্ণনা আর উপমায় ভরা এ লেখা যেন চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে বেণুর সেই গ্রামটি। ‘রেণুর ছোটবেলা মানে শৈশব তার ছোট ফুপুর স্নেহে পরিপূর্ণ ছিল। একটা মুহূর্তও তিনি বেণুকে আড়াল হতে দিতেন না। নিঃসন্তান ছোট ফুপুর কলিজার টুকরা ছিল বেণু। ছোট ফুপু যখন খোশ মেজাজে থাকতেন তখন বেণুকে চাঁদের টুকরোও বলতেন। কখনো কখনো বলতেন আমার আদরের সোনা আবার কখনো বলতেন আল্লাহ বেসাত। এই যে আদরের ডাক। এই যে স্নেহের আহŸান। বেণুর মনে হলেই চোখে জল আসে। ফুফুর মমতা মাখানো ছায়া যেন ঘুরেফিরে ওর পাশে পাশে ঘুরে বেড়ায়।’ ‘বেণুর শৈশবের দিনগুলো অনেক অনেক আগের রঙিন রূপকথার মতো মনে হয়। কিছু কথা খুব মনে পড়ে আবার কিছু একেবারেই মনে পড়ে না। ছোট্ট একটু আলোর মতো উঁকি দিয়ে যায়। কুয়াশাময়, আলো-আঁধারি সোনারই দিগুলো বেণুকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। ডেকে পাশে বসায়। অস্ফুট স্বরে কথা বলতে চায়। বেণু অবসর বেলায় সে আলোর খেলায় মাঝেমধ্যে সাড়া দেয়।’ বেশ কয়েটি শিরোনামে ভাগ করা পর্ব রয়েছে গল্পে। গল্পের শেষ দিকটা খুবই বেদনার। বেণুর ছোট বোনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ গল্প শেষ হওয়াতে মনের মধ্যে একটা তীব্র বেদনা থেকে যায়। প্রিয়জন হারানোর বেদনা আর শৈশবের স্মৃতিগুলো একাকার হয়ে ধরা দিয়েছে বইটিতে।