প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কমিকস্ বলতে কী বোঝায়―‘কমিকস্ বা চিত্রকথা হলো একধরনের মাধ্যম, যেখানে চিত্র এবং লেখার দ্বারা কোনো ভাবনা প্রকাশ করা হয়। কমিকস্ প্রায়ই ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি প্যানেল বা চিত্রের রূপে থাকে। বিভিন্ন লৈখিক কৌশল, যেমন কথার বেলুন, আখ্যান এবং ধ্বন্যাত্মক শব্দ কথোপকথন, বর্ণনা, বিভিন্ন আওয়াজকে নির্দেশ করে।’ বাংলাদেশে কমিকস্ নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আহসান হাবীব। বইটিতে ছয়টি কমিকস্ রয়েছে। প্রতিটি কমিকস্ই চমৎকার ও বুদ্ধিদীপ্ত। এই কমিকসের প্রধান দুটি চরিত্র পল্টু ও বিল্টু। পল্টু আর বিল্টুল নানা রকম কৌত‚হল, অভিযান আর রোমাঞ্চকর সব বিষয় নিয়ে এই কমিকস্গুলো লেখা হয়েছে। শিশু-কিশোরেরা কমিকস্ পড়ে এতই আনন্দ ও প্রভাবিত হয় যে, কমিকসের চরিত্রগুলোর মতোই তারা হতে চায়। যদিও আমাদের দেশে বিদেশি কমিকসের বইয়ের সংখ্যা বেশি! এই কমিকস্ বইয়ের মধ্যে আমাদের দেশীয় যে সংস্কৃতির চর্চা খুব একটা লক্ষ করা যায় না। ২৪ পৃষ্ঠার এ বইটি সম্পূর্ণ রঙিন ও উন্নতমানের কাগজে ছাপা। মজবুত বাঁধাই। কমিকস্গুলোর নাম হলো―পল্টু-বিল্টুর এ্যাডভেঞ্চার, গোপন মিশন, মিরর ইউনিভার্সে অভিযান, বিল্টুর ঘুম, এ্যালিয়েন এবং মিথ্যা পদক। ‘এ্যালিয়েন’ নামক কমিকসে পল্টু আর বিল্টু ঘরে বসে কাজ করছিল। হঠাৎ দড়জায় ঠকঠক আওয়াজ। পল্টু গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই দেখল এ্যালিয়েন দাঁড়িয়ে আছে! পল্টু এ্যালিয়েন দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল! এরপর কথোপকথনের মধ্যে এ্যালিয়েনই পল্টু আর বিল্টুকে বলে আমি এ্যালিয়েন! ছোটদের কৌত‚হলের অন্ত নেই। এরা নতুন কিছু জানতে, শিখতে, দেখতে সর্বদাই উন্মুখ হয়ে থাকে। এদের যত বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক ও কল্পনা-উদ্রেক কাজে লাগনো যাবে ততই তারা হয়ে উঠবে মেধাবী। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আমাদের বিশ্ব হাতের মুঠোয়। ফলে নানা বিষয়ে জানা খুবই সহজ। বিশেষ করে কার্টুন ও নানা রকম অ্যানিমিশন ফিল্ম ছোটদের সময় ভাগ করে নিচ্ছে। এর পরও বলব, বইয়ের বিকল্প নেই। হাতে নিয়ে কাগজের ঘ্রাণে পাওয়া আর নীরবে স্বপ্ন কল্পনার রাজ্যে ঘুরতে বইয়ের বিকল্প কিছুই নেই। একটি ভালো বই একটি শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে। সবাই মিলে বইটি পড়লে সবাই মিলে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যাবে।
ড্যাড অফ বাংলাদেশী কার্টুন’ বা ‘গ্র্যান্ডফাদার অফ জোকস’সহ আরো নানা উপাধিতে ভূষিত জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর সিলেট অঞ্চলে। মা আয়েশা ফয়েজ ছিলেন একজন গৃহিণী ও বাবা ফয়জুর রহমান আহমদ একজন প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাবার সরকারি চাকুরির সুবাদে বগুড়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, পিরোজপুর, দিনাজপুর, মোহনগঞ্জসহ আরও কিছু জায়গায় তাঁর শৈশব কাটে, এমনকি পড়াশোনাও করেছেন আটটি ভিন্ন স্কুলে। বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ম্যাগাজিন পত্রিকা ‘মৌলিক’ ১৯৯৯ সালে আহসান হাবীব ও হাসান খুরশিদ রুমির হাত ধরেই প্রকাশিত হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে পাস করার পর থেকে তিন দশক ধরে তিনি ‘উন্মাদ’ পত্রিকার সাথে জড়িত আছেন, যে পত্রিকাকে তাঁর খ্যাতির মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা যায় । উন্মাদ পত্রিকা সম্পাদনা ছাড়াও বর্তমানে ‘International Journal Of Comic Art’ কার্টুন পত্রিকার বাংলাদেশী এডিটরের দায়িত্বও পালন করছেন এবং পাশাপাশি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগে ২০১৫ সালে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। আহসান হাবীব (কার্টুনিস্ট) এর বই সমূহ এর তালিকায় রয়েছে ‘রাত বারোটার পরের জোকস’, ‘ফোর টুয়েন্টি ফোর আওয়ার জোকস’, ‘জোকস সমগ্র’, ‘৯৯৯ জোকস একটা ফাও’, ‘১০০১টা জোকস ১টা মিসিং’, ‘ভ্যালেন্টাইন জোকস’, ‘জিনি জোকস’ ইত্যাদি। জোকস এর বই ছাড়াও তিনি লিখেছেন নন-ফিকশন, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, গ্রাফিক নোভেল ও নাটক। সেসকল ধারায় আহসান হাবীব (কার্টুনিস্ট) এর বই সমগ্র এর মাঝে আছে ‘আব্জাব্’, ‘লিখতে লিখতে লেখক’, ‘বাবা যখন এক্কেবারে ছোট’, ‘ইশকুল টাইম’, ‘অফিস টাইম’, ‘যাহা বলিব মিথ্যা বলিব’, ‘ভূত যখন Ghost’, ‘সায়েন্স ফ্রিকশন’, ‘বাছাই ভূত’, ‘পাওয়েল ব্রুনস্কির বিচার’, ‘সায়েন্স ফিকশন সংকলন মৌলিক’, ‘সূর্য যেখানে নীল’, ‘হনন’, ‘এবং অতঃপর’, ‘হাইপোথিসিস’, ‘একটি আদর্শ মেস (ধূমপান মুক্ত)’ (সিরিয়াল), ‘আলিবাবা একচল্লিশ চোর’, ‘মিথস্ক্রিয়া’, ‘কাসাহারা’, ‘ভয়’ প্রভৃতি। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে রয়েছে তুরস্ক থেকে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা প্রতিযোগিতা, হাভানা প্রতিযোগিতাসহ আরও নানা জায়গার অসংখ্য পুরস্কার।